৫০০ টাকা বাড়ল ইলিশের দাম, শীতের সবজির বাজারও গরম

৪ সপ্তাহ আগে
চাহিদা-জোগানের মারপ্যাঁচে ওঠানামা করছে শীতের সবজির দাম। বাজারে এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। আর সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৪০০-৫০০ টাকা বেড়েছে ইলিশের দাম। তবে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে মুরগির দাম।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ানবাজারসহ বেশকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

 

দেশের ইলিশের বাজার এখন অস্থির। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু এ রুপালি মাছ। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩০০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৯০০ টাকা হারে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত।

 

আরও পড়ুন: ভরা মৌসুমেও বাঙালির পাতে ইলিশ ওঠা দুষ্কর!

 

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত মাছ না আসায় দাম বাড়ছে। ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় বাইরে চলে যাচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের ইলিশ বিক্রেতা  মো. শুকুর আলী বলেন,

ইলিশ কম ধরা পড়ছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। দিন দিন ইলিশের দাম ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে কমছে বিক্রিও।

 

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

আর ক্রেতারা বলছেন, দিনকে দিন যেভাবে দাম বাড়ছে ইলিশের, তাতে ইলিশ কেনাই দুরূহ হয়ে পড়বে। মিজানুর নামে এক ক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহেও ইলিশের কেজি ছিল ১৭০০-১৮০০ টাকা। সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এভাবে দাম বাড়লে ইলিশ কেনাই মুশকিল।

 

কেজিতে ১০-৩০ টাকা বেড়ে গেছে অন্যান্য মাছের দামও। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছ কিনছেন ক্রেতারা। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।

 

এদিকে বাজারে উঠে গেছে প্রায় সব ধরনের শীতকালীন সবজিই। শীতের সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন প্রায় সব দোকানিই। কিন্তু চাহিদা-জোগানের অজুহাত দিয়ে প্রতি সপ্তাহেই বাজারে ওঠানামা করছে দাম।

 

বিক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজি এখনও বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আসছে না। এতে দাম ওঠানামা করছে। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের সবজি বিক্রেতা উজ্জ্বল বলেন, বাজারে এখন সবজির দাম ওঠানামা করছে। এক সপ্তাহ কমলে, পরের সপ্তাহে বাড়ে। মূলত সরবরাহ কম-বেশির কারণে দামের এই ওঠানামা।

 

আরও পড়ুন: সিন্ডিকেটের যাঁতাকলে কি পিষ্টই হবেন ভোক্তারা?

 

আর রাজধানীর কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা নূরুল ইসলাম বলেন,

সপ্তাহ ব্যবধানে কোনো কোনো সবজিতে ৫-১০ টাকা কমলেও কোনটিতে আবার বেড়ে গেছে। প্রতি সপ্তাহেই দাম ওঠানামা করছে। পুরোদমে শীতের সবজি না আসা পর্যন্ত বাজারে এই অস্থিরতা থাকবেই।

 

তবে ক্রেতাদের দাবি, শীতের সবজি আসতে শুরু করলেও দাম কমছে না আশানুরূপভাবে। সাইদুল নামে এক ক্রেতা বলেন, শীতকালীন সবজিতে বাজার ভর্তি। তবুও নাগালে আসছে দাম। বাজারে কারসাজি চলছে।

 

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, লতি ৭০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা ও পটোল ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৪০ টাকা, গাজর ১৩০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, শিম ৮০ টাকা, শালগম ৬০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি ধনেপাতা ৪০-৬০ টাকা, পেঁয়াজের কালি ৫০-৬০ টাকা ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা।

 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবজি কিনছেন ক্রেতারা। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০-১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০-৪০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০-১৫ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। আর খুচরা পর্যায়ে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, যা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা দরে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বেড়েছে কাঁচা মরিচের। এতে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়েই কমেছে দাম।

 

এদিকে, সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে অন্যান্য মাংস ও ডিমের দাম। কেজিতে ১০ টাকা কমে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৭৫-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

এছাড়া প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।

 

মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বাড়ায় কমেছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী হাকিম বলেন,

বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। এতে দাম কমেছে। তবে ইতোমধ্যে বিয়ের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে; দাম কতদিন কম থাকবে বলা যাচ্ছে না। চাহিদা বাড়লে দামও বেড়ে যেতে পারে।

 

প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায়। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দামও। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

 

আরও পড়ুন: মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যেই নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির!

 

আর বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৪৪-১৪৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০-২৫০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়।

 

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।

 

আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন