হামাসের বিরুদ্ধে ‘চুক্তি লঙ্ঘন’র অভিযোগ নেতানিয়াহুর

৩ সপ্তাহ আগে
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ করেছে হামাস। গোষ্ঠীটি অনেক আগে উদ্ধার হওয়া একজন বন্দির দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা নিয়েও আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইসরাইল বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালালেও হামাস শান্তি চুক্তির শর্ত মেনেই এক এক করে ইসরাইলি জিম্মিদের ফেরত দিচ্ছে। গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) সেই রকমই এক বন্দির মৃতদেহ ইসরাইলের হাতে তুলে দিল ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি।

 

সেনাবাহিনী মৃতদেহ শনাক্তকরণের জন্য ফরেনসিক ইনস্টিটিউটে নিয়ে যায়। এরপর ইসরাইলি ফরেনসিক বিশ্লেষকরা জানান, হামাসের ফেরত দেয়া সর্বশেষ দেহাবশেষটি ওফির জারফাতি নামে এক ইসরাইলি জিম্মির, যাকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলার পর গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং ওই বছরের নভেম্বরে তার আংশিক দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।

 

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের এই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অনেক আগেই উদ্ধার হওয়া বন্দির দেহাবশেষ ফেরত দিয়ে হামাস যুদ্ধবিরতি ‘চুক্তি লঙ্ঘন’ করেছে। তিনি বলেন, সোমবার হামাস একজন মৃত বন্দির অতিরিক্ত দেহাবশেষ হস্তান্তর করেছে যার দেহাবশেষ প্রায় দুই বছর আগে ইসরাইলি বাহিনী উদ্ধার করেছে।

 

আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত হামলা নিয়ে যা বললেন রুবিও

 

সেই সঙ্গে নেতানিয়াহু এও জানান যে, এই চুক্তি ‘লঙ্ঘনের’ জবাবে ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করবেন তিনি। রিপোর্ট মতে, গাজায় দুই বছরের যুদ্ধের সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনী প্রায় ৫১ জন বন্দির মৃতদেহ উদ্ধার করে।

 

এদিকে ইসরাইলের হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম বলেছে, চুক্তি অনুযায়ী ৪৮ জন বন্দিকে ফেরত দেয়ার সময়সীমা দু’সপ্তাহ আগেই পেরিয়ে গেছে। অথচ এখনও ১৩ জন বন্দির লাশ হামাসের হাতে রয়েছে। এসব বন্দিদের দেহ কোথায় আছে, তা হামাস সব জানে।’

 

হামাস যতক্ষণ না সব বন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে, ততক্ষণ চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে যাওয়া উচিত নয় বলেও জানিয়েছে ফোরাম। হামাসও নিশ্চিত করেছে, গাজায় এখনও ১৩ জন ইসরাইলি জিম্মির লাশ রয়েছে। যার মধ্যে ১১ জন ইসরাইলি এবং ১ জন থাই ও ১ জন তানজানিয়ার শ্রমিকের।

 

আরও পড়ুন: গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনীতে সেনা পাঠাতে পারে পাকিস্তান

 

তবে হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, ‘এই বন্দিদের লাশ কোথায় রয়েছে আমরা জানি না। তবে খোঁজ চলছে। ইসরাইলের হামলায় অধিকাংশ ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফলে লাশগুলোর সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করা কঠিন।’ যত দ্রুত সম্ভব সমস্ত বন্দিদের দেহাবশেষ ইসরাইলের হাতে তুলে দেয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

 

এদিকে এসব বন্দিদের দেহাবশেষ খুঁজে বের করতে উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে মিশর। রেডক্রসের কর্মী এবং হামাসের একটি দলও অনুসন্ধান অভিযান চালাচ্ছে। এর মধ্যে দেহাবশেষ নিয়ে হামাসের বিরুদ্ধে ‘চুক্তি লঙ্ঘন’র অভিযোগকে নেতানিয়াহু এবং তার বিরোধী রাজনীতিকরা নিজেদের জন্য ‘রাজনৈতিক মূলধন’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। 

 

গত ১০ অক্টোবর হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু এর পরদিনই ইসরাইলি বাহিনী যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় হামলা চালায়। সেই থেকে প্রায় প্রতিদিনই হামলা চলছে। এতে আগের মতোই ঘটছে হতাহতের ঘটনা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯৩ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

 

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন