সাবেক ভূমিমন্ত্রীর সম্পদ নিয়ে কিছু দিন আগে আল-জাজিরার প্রতিবেদন গোটা দেশে ঝড় তোলে। দেশের বাইরে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের অঢেল সম্পদের হিসেব উঠে আসে ওই প্রতিবেদনে। যদিও তার সবশেষ হলফনামায় উল্লেখই ছিল না এসব সম্পদের।
একইভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘড়ি বিলাস নিয়ে বেশ আলোচনা আছে। তার হলফনামায় উল্লেখ করা বার্ষিক আয়ের চেয়ে বেশি দামের ঘড়ি তিনি পরতেন বলে গুঞ্জন আছে।
নির্বাচনে একজন প্রার্থীর নিজের ৮ ধরণের তথ্য জানিয়ে হলফনামা জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। হলফনামায় আয়, সম্পদের হিসেব জমা দিতে হলেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী কিংবা ওবায়দুল কাদের তাদের সব হিসেব জমা না দিয়েও প্রার্থী হয়েছেন কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, কমিশন প্রার্থীর ঋণের তথ্য ছাড়া আর কিছুই নিজ থেকে যাচাই করে না। অথচ এই হলফনামার মাধ্যমেই ভোটাররা তার কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীর সততা- অসততা সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ সিইসির
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের কয়েকটি নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হওয়ার কারণে সুযোগ থাকলেও প্রার্থীর হলফনামা যাচাই বাছাই করেনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন শুধু হলফনামা নয়, প্রার্থীর নির্বাচনী আয় ব্যয়ের হিসাবও যাচাই করা উচিত। হলফনামায় তথ্য গোপন করলে বা মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল করার দাবি জানান তারা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সময় সংবাদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
আইনে কিন্তু বলা ছিল না যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সেটা করতে পারবে না। তাই ইসি চাইলে সেটা যাচাই করতে পারতো। আজ্ঞাবহ কমিশনের কারণেই দুর্নীতিটা সুরক্ষিত হয়েছে। অপরাধ, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অবস্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহর করে অঢেল সম্পদ অর্জনের সংস্কৃতিটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে স্বাভাবিকতায় রূপান্তর হয়েছে।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেলে জবাবদিহির আওতায় আনার বিষয়ে আইনের মধ্যে আরও সুস্পষ্ট করা উচিত।
নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, ইসি প্রশ্নের সম্মুখীন না হলে উদ্যোগী হয় না। ওপেন সিক্রেট থাকে যে লোকে জানে কিন্তু অভিযোগ থাকে না বলে ইসি এই বিষয়টিকে আমলে নিতে চায় না।
আরও পড়ুন: কবে হতে পারে জাতীয় নির্বাচন, যা জানালেন সিইসি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন,
হলফনামাটা আগে যাচাই বাছাই করে মনোনয়নপত্রটা নিশ্চিত করা হলে সেটা বেশি ফলপ্রসূ হবে। কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকলে যারা ভেরিফিকেশন করলো, তাদেরও যেমন দায় নিতে হবে, তেমনি মিথ্যা তথ্য দেয়া ব্যক্তিকেও দায় নিতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, হলফনামায় তথ্য গোপন করতে পারলে কালো টাকা উপার্জন যেমন সহজ তেমনি পরবর্তী নির্বাচনে সেই টাকার অবৈধ ব্যবহারের সুযোগও তৈরী হয়, যা সুশাসন ও গণতন্ত্রের ভিতকেই দুর্বল করে।
এ বিষয়ে ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রার্থীদের আয়-ব্যয়ের হিসাব যতদিন পর্যন্ত বাস্তবভাবে স্বচ্ছ করা যাবে না, ততদিন পর্যন্ত আমাদের জবাবদিহিমূলক সরকার আসার সম্ভাবনা কম।
]]>