সুপারি: ২৩০০ কোটি টাকার উৎপাদনেও নেই কৃষি বিভাগের সহায়তা

১ সপ্তাহে আগে
চলতি মৌসুমে ভোলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৬৫ হাজার মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়েছে; যার বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে জেলায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য ও অর্থনীতিতে সুপারি শত শত বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এতে কোনো ধরনের সহায়তা করছে না সরকার বা স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাগান মালিকরা জানান, জেলায় হেক্টর প্রতি কাঁচা ৭ থেকে ৮ মেট্রিক টন সুপারির ফলন হয়েছে। শুকনোর পর যা হেক্টর প্রতি ৫ মেট্রিক টন; যার বাজার দাম আছে দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা। লাভজনক এ খাতে সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।


সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্বীপ জেলা ভোলায় প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মুখে মুখে একটি প্রবাদ প্রচলিত ছিল ‘ধান সুপারি ইলিশের ঘোলা এ তিনে ভোলা।’ এর মধ্যে ধান আর ইলিশ উৎপাদনে সরকারের ব্যাপক তদারকি থাকলেও সুপারি প্রতি খেয়াল রাখছে না কেউ। শুধু কৃষকদের একক প্রচেষ্টাই অন্যতম বাণিজ্যিক ফসলে পরিণত হয়েছে ভোলার সুপারি। বছরে প্রায় দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকার সুপারির বাজারে রাষ্ট্রের নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ বা উন্নয়নের কার্যক্রম।


চাষিরা জানান, অন্য কৃষি ফসলের তুলনায় সুপারি অনেক লাভজনক। যেখানে ধান বা সবজি বছরে শতাংশ প্রতি এক থেকে দেড়হাজার টাকার ফসল পাওয়া যায়। সেখানে সুপারি পাওয়া যায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায়। এ ছাড়া একবার সুপারির গাছ লাগালে এটা ৩০ থেকে ৪০ বছর ফলন দেয়। একটা গাছে ২ থেকে ৩ ভি (স্থানীয় হিসাব ৩২০ পিচে এক ভি) সুপারির ফলন হয়। এ বছর মাঠ পর্যায়ে প্রতি ভি সুপারি ৪৫০ টাকা থেকে ৫৩০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে।


আরও পড়ুন: বাগেরহাটে সুপারির ফলন ভালো হলেও দামে হতাশ চাষিরা


সদর উপজেলার রতনপুরের বাগান মালিক আবু মুসা জানান, তাদের পূর্ব পুরুষরা বাগান করে গেছেন যুগ যুগ ধরে। তার ফল ভোগ করছেন তারা। অন্য যে কোনো কৃষি ফসলের চেয়ে সুপারি লাভজনক। বাগান করতে একবারই খরচ করতে হয়। এর পাতা জ্বালানি হিসাবে বিক্রি করে আয় হয়। ফলন কমে গেলে গাছ বেঁচেও টাকা পাওয়া যায়।


ওই এলাকার বাগানি মফিজুর রহমানের মতে, ফল থেকে আয়ের পাশাপাশি উপকূলের মানুষকে ঝড় বাদল থেকেও রক্ষা করে সুপারি গাছ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখে। মূলত আশ্বিন মাস থেকে সুপারি গাছ থেকে নামানো (পাড়া) শুরু হয়। একজন লোক বাগানের এক প্রান্তের গাছে উঠে এক গাছ থেকে অন্য গাছে জাম্প করেন। এভাবে একজন শ্রমিক শতাধিক গাছ থেকে সুপারি পাড়েন। সুপারি পাড়া এসব ব্যক্তিরা বিশেষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। এক ছড়া সুপারি পাড়ার জন্য সাত টাকা করে দিতে হয় শ্রমিককে।


 

ভোলায় হেক্টর প্রতি কাঁচা ৭ থেকে ৮ মেট্রিক টন সুপারির ফলন হয়েছে। ছবি: সময় সংবাদ


সুপারি পাড়ায় অভিজ্ঞ শ্রমিক শিবপুরের রফিজল জানান, মৌসুমের তিন মাসে তারা জনপ্রতি এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করতে পারেন। গাছ থেকে নামানো সুপারিগুলো বাড়িতেই জড়ো করে রাখেন। সেখান থেকেই বেপারিরা কিনে নেন। সুপারি মূলত পানের সঙ্গে খাওয়ার প্রচলন থাকলেও ঔষধি গুণাগুণ, পশুখাদ্য, প্রাকৃতিক রঙ তৈরি, হস্তশিল্পসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার হয়। স্বাদ ও মান ভালো হওয়ায় ভোলার সুপারির কদর রয়েছে সারা দেশেই।


আরও পড়ুন: সুপারির বস্তায় বিদেশি রাইফেল-গুলি


স্থানীয় চাষিদের অভিযোগ, জেলার অন্যতম অর্থকরী এ ফসলে প্রচার ও প্রসারে কৃষি বিভাগের নেই কার্যক্রম। শুধু কাগজ কলমে হিসাব রাখার মধ্যেই তাদের কাজ সীমাবদ্ধ।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, ভোলার উপপরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক জানান, ঐতিহ্যগতভাবেই ভোলায় সুপারি চাষ হচ্ছে। সুপারির জন্য দেশের অন্যতম জেলা ভোলা। স্বাদ ও মানে ভালো হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। গাছ লাগানোর পর তেমন কোনো খরচ নাই। অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনক। বাজার মূল্যও ভালো। তবে সুপারি চাষিদের আর্থিক সহায়তা করতে না পারলেও প্রযুক্তিগত সহায়তার আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।


কৃষি বিভাগের হিসবে জেলায় ছয় কোটি ৪২ লাখ সুপারি গাছ রয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি এর সংখ্যা আরও বেশি হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন