বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতকে সাইবার হামলা থেকে সুরক্ষা দিতে ব্যয় হয়েছে ৫৩ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। বিআইবিএমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশে ডিপোজিট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ কোটি ৫০ লাখ, আর অগ্রিম হিসাব প্রায় ১ কোটি ৪৩ লাখ। এদিকে ব্যাংকের শাখা, এটিএম, সিআরএম, এজেন্ট ব্যাংকিং ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং কার্যক্রমের পরিধিও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
তবে এসব সম্প্রসারণের বিপরীতে সাইবার সুরক্ষা ততটা জোরদার না হওয়ায় হ্যাকারদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে ব্যাংকগুলো। বিআইবিএম জানায়, দেশের ব্যাংক খাতে প্রতিদিন ১৪৫ থেকে ৬৩০ বার পর্যন্ত সাইবার হামলা হচ্ছে, যার বড় অংশই আসে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। দেশের ভেতর থেকেও প্রায় ২ শতাংশ হামলা চালানো হয়।
ব্র্যাক ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক মাঈনুদ্দিন বলেন, ‘সুরক্ষার জন্য সফটওয়্যার ও টুলস কেনার পর ব্যাংকগুলো রক্ষণাবেক্ষণে বিনিয়োগ করতে চায় না। বোর্ডের অনুমোদনের জটিলতার কারণেও অনেক সময় দেরি হয়। এই ফাঁকেই সুযোগ নেয় হ্যাকাররা।’
বিআইবিএমের অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, ‘সাইবার হামলার ধরন প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে। নতুন ডিভাইস এলে তাৎক্ষণিক আপডেট না থাকলে ঝুঁকি বাড়ে। বড় ব্যাংকগুলো তুলনামূলক বেশি বিনিয়োগ করলেও ছোট ব্যাংকগুলো পিছিয়ে আছে।’
আরও পড়ুন: আমানত-ঋণে সুদহারের পার্থক্য, সীমা অতিক্রম করেছে ৭৫ শতাংশ ব্যাংক
তথ্য বলছে, হামলাগুলোর মধ্যে ৬৮ শতাংশ ম্যালওয়্যার, ৪৮ শতাংশ ডস ও ফিশিং, ৪৬ শতাংশ স্প্যাম। ভেন্ডরদের মাধ্যমে হয় ২৭ শতাংশ হামলা এবং ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা বা হ্যাকটিভিস্টদের যোগসাজশে হয় প্রায় ১৬ শতাংশ। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘বড় ধরনের সাইবার হামলার পেছনে প্রায়ই ইনসাইডারদের সংশ্লিষ্টতা থাকে।’
একবার সাইবার হামলার শিকার হলে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারে পুনর্বিনিয়োগ করতে হয় মোট ব্যয়ের ৩৭ শতাংশ, গ্রাহকের ব্যবসায়িক ক্ষতি হয় ১৮ শতাংশ এবং সরাসরি আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফুল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যাতে গাফিলতির সুযোগ না নেয়, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো ব্যাংক অপ্রস্তুত থাকলে বা কর্মকর্তার যোগসাজশ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’