গাজীপুরে পানির স্তর নিচে নামছেই, সফল হয়নি কোনো পরিকল্পনা

৬ ঘন্টা আগে
প্রতিষ্ঠার এক যুগেও গাজীপুরবাসীর পানির যোগান দিতে পারেনি সিটি করপোরেশন। দুর্নীতি আর জনবল ঘাটতির অজুহাতে সফল হয়নি কোনো নগর প্রধান। দিন দিন পানির স্তর নিচে নামায় শুরু হয়েছে এর ভয়ঙ্কর প্রভাব। পরিস্থিতি উত্তরণে শিগগিরই নদীর পানি পরিশোধন করে চাহিদা মেটানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

নগরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে এলাকাভিত্তিক পাম্প স্থাপন করেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। কথা ছিলো এই পাম্পের মাধ্যমে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে পানি। সেই লক্ষ্যে পাম্পগুলোতে পানির সংযোগ দিলেও তা আর সবার ঘরে পৌঁছায় নি। এমন পরিস্থিতিতে, নিজেদের ইচ্ছেমতো লাইন স্থাপন করে বাড়ির পানির যোগান দিচ্ছেন এলাকাবাসী।

 

বাসিন্দাদের দাবি, পাম্প অপারেটররা টাকার বিনিময়ে বাড়ি বাড়ি অবৈধ লাইন স্থাপন করে দিয়েছে। যদিও পাম্প অপারেটরা বলছেন, এলাকার প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা এই কাজে জড়িত।

 

অবৈধ পথেও যারা পানির যোগান দিতে পারেননি তারা মাটি খুঁড়ে তলদেশে বসিয়েছেন সাবমারসিবল পাম্প। যদিও সিটি করপোরেশন এলাকায় তা অবৈধ। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই কেউ কেউ ভূগর্ভস্থ থেকে পানি তুলে করছেন ব্যবসাও।

 

আরও পড়ুন: ৬ বছর ধরে বন্ধ পানি শোধনাগার, মহেশপুরে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে ‘টিউবওয়েলের পানি’

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে, নগরীর ৮৫ ভাগ মানুষই এই ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। মানুষের ব্যবহারের পানির তথ্য পাওয়া গেলেও এই অঞ্চলের  শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ভূগর্ভস্থল থেকে যে বিপুল পরিমাণ পানি উত্তোলন করছে তার কোনো হিসেব নেই কারো কাছেই। এমন বাস্তবতায় প্রতিবছর ২ মিটার করে নিচে নামছে পানির স্তর। গবেষণায় দেখা যায় ২০০০ সালে গাজীপুরে পানির স্তর ছিলো ৮ মিটার নিচে। তবে ২০০৪ সালে শিল্পাঞ্চলে পরিণত হওয়ার পর থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে এই স্তর নেমেছে কয়েক গুণ। ২০২২ সালে পানির স্তর নামেছে ৫০ মিটারের নিচে।

গাজীপুরে পানির স্তর নিচে নামার পরিসংখ্যান। গ্রাফিক্স: সময় সংবাদ 

 

তথ্য বলছে, নগরীর প্রায় ৫০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে বৈধ পানির লাইনের সংখ্যা ২০ হাজার। যা মোট চাহিদার মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ। ফলাফল, একদিকে যেমন হুমকির মুখে পরিবেশ, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।  

 

জলবায়ু নিয়ে গবেষণা সেন্টার সিসিডিবির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এরইমধ্যে পানির অপব্যবহারের মাসুল গুনতে শুরু করেছে গাজীপুরবাসী। আর নগরীর মাস্টারপ্ল্যানের দায়িত্বে থাকা ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যা সমাধানে আশপাশের নদীর পানি পরিশোধন করে তা কাজে লাগানোর বিকল্প নেই।

 

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ কামাল হোসাইন বলেন, এক সময় গাজীপুরে বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী দেখা যেতো। তবে পানির স্তর নিচে নামার প্রভাবে বর্তমানে তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এছাড়া অনাবৃষ্টিও এর প্রভাব। যা ফসল উৎপাদনে বেঘাত ঘটছে। পানির স্তর নিচে নামার প্রভাবে নানা শারীরিক জটিলতাও দেখা যেতে পারে বলে জানান তিনি।

 

ডুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, মাস্টারপ্ল্যানে আমরা মেঘনা নদীর পানি পরিশোধিত করে ব্যবহার করার কথা বলেছি। তবে বিভিন্ন কারনে তা বাস্তবায়ন হয়নি। আশা করছি কোনো রাজনৈতিক সরকার আসলে তা বাস্তবায়ন হবে।

 

দেরিতে হলেও বিষয়গুলো আমলে নিয়েছে বর্তমান নীতিনির্ধারকরা। নিজেদের ব্যার্থতা স্বীকার করে নগরীর পানির দায়িত্ব নিতে শিগগিরই ওয়াসা স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানান নগর প্রধান।

 

আরও পড়ুন: গভীর নলকূপেও উঠছে না পানি, ঝালকাঠিতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট

 

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিপুর পরিমাণ জনসংখ্যা পানির যোগান দেয়ার সক্ষমতা সিটি করপোরেশনের নেই। তবুও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরইমধ্যে ওয়াসা স্থাপনের জন্য একটি আলোচনা হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাবো।

 

সাধারণত কোনো অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষায় ভূপৃষ্ঠে পানি প্রয়োজন ৭ থেকে ১৬ শতাংশ। তবে আরডিআরসির গবেষণা বলছে, গাজীপুরে ভূপৃষ্ঠে পানির পরিমাণ মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন