বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে আজ পর্যন্ত কোনো ম্যাচ না জেতা সান মারিনো অবিশ্বাস্যভাবে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছে। এই সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হতে পারে যদি তারা তাদের পরবর্তী ম্যাচে রোমানিয়ার বিপক্ষেও হারের ধারা বজায় রাখতে পারে।
ভুল পড়েননি। ইউরোপীয় অঞ্চলের বাছাই পর্বে গ্রুপ 'এইচ'–এ সাতটি ম্যাচেই হেরেছে সান মারিনো এবং আগামী মাসে রোমানিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচের আগেই তারা গ্রুপের তলানিতে থাকার নিশ্চয়তা পেয়েছে। নিশ্চয় মনে প্রশ্ন জাগছে বাছাই পর্বের তলানিতে থাকলে কীভাবে বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়?
ঝেড়ে কাশা যাক তবে। সান মারিনো; যাদের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই আধা-পেশাদার, বাছাই পর্বে মাত্র একটি গোল করেছে, কিন্তু হজম করেছে ৩২টি। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের সর্বনিম্ন স্থানে থাকা দেশটির বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা জেগেছে মূলত ২০২৪-২৫ মৌসুমে উয়েফা নেশন্স লিগে তাদের সাফল্যের জন্য। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সান মারিনো ২০২৪-২৫ নেশন্স লিগে নিজেদের গ্রুপ 'ডি১'-এর শীর্ষে থেকে আসর শেষ করেছে। জিব্রাল্টার ও লিখটেনস্টাইনের বিপক্ষে চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছিল তারা।
আরও পড়ুন: মেসির নামে টুর্নামেন্ট, অংশ নেবে বার্সেলোনা-চেলসিও
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা-মেক্সিকোয় ৪৮ দলের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বকাপে দল বাড়ায় ইউরোপের দলের কোটাও বেড়েছে। আগামী আসরে ইউরোপ থেকে মোট ১৬টি দেশ অংশ নেবে। বাছাইপর্বের ১২টি গ্রুপের চ্যাম্পিয়নরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জায়গা পাবে মূল পর্বে। আর ১২ গ্রুপের রানার্স আপরা যোগ দেবে নেশন্স লিগের চার সেরা গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে—যারা বাছাইপর্বে নিজেদের গ্রুপের প্রথম দুইয়ে থেকে প্লে-অফ নিশ্চিত করতে পারেনি। নেশন্স লিগের ১৪টি গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের মধ্যে বর্তমানে শুধুমাত্র মলদোভা ও সান মারিনো এখনো প্লে-অফ পজিশনের বাইরে রয়েছে, তবে এই অবস্থান পরিবর্তনের সুযোগ তাদের আছে।
নেশন্স লিগের পারফরম্যান্সের সুবাদে বর্তমানে যে চারটি দল প্লে-অফের পথে রয়েছে, তারা হলো—ওয়েলস, রোমানিয়া, সুইডেন ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। সান মারিনোর যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন–এই দলগুলোর মধ্যে অন্তত দুটি যেন বাছাই পর্বে নিজ নিজ গ্রুপে প্রথম দুইয়ে উঠে আসে—তবে এমনভাবে যেন অন্য কোনো নেশন্স লিগ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন দল তাদের জায়গা না হারায়।
এই চার দলের মধ্যে রোমানিয়া আছে সান মারিনোর গ্রুপে। এই মুহূর্তে গ্রুপ এইচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অস্ট্রিয়া। দুই ও তিনে থাকা বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং রোমানিয়া যথাক্রমে ১৩ ও ১০ পয়েন্ট নিয়ে দুই ও তিন নম্বরে। আগামী নভেম্বরে এই গ্রুপের শেষ ম্যাচে রোমানিয়ার মুখোমুখি হবে সান মারিনো। সেই ম্যাচে যদি সান মারিনো বড় ব্যবধানে হারে, তাহলে হয়ত বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাকে পেছনে ফেলে রোমানিয়া দুই নম্বরে উঠে যাবে। রোমানিয়ার দরকার গোল ব্যবধান বাড়ানো, কারণ তারা তিন দিন আগে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার বিপক্ষে খেলবে এবং সেই ম্যাচেই তাদের অবস্থান নির্ধারিত হতে পারে।
রোমানিয়া দ্বিতীয় স্থানে উঠলে তারা বাছাই পর্বের কোটায় প্লে-অফে উঠে যাবে। সে ক্ষেত্রে কপাল খুলবে সান মারিনোর। নেশন্স লিগের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন কোটায় তারা জায়গা পাবে প্লে-অফে। তবে বসনিয়ার বিপক্ষে রোমানিয়া হেরে গেলে স্বপ্নভঙ্গ হতে পারে তাদের। সান মারিনোর জন্য দরজা খুলে যেতে পারে আরও দুই দলের ফলাফলের ভিত্তিতে। সুইডেন বা নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যদি নিজ নিজ গ্রুপের শীর্ষ দুইয়ে উঠতে পারে, তাহলেও সান মারিনোর দরজা খুলবে, কারণ এই দুই দলও নেশন্স লিগে নিজ নিজ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন।
আরও পড়ুন: ইউরোপের ফুটবলে ফিরছেন নেইমার!
তবে, সুইডেনের জন্য নিজ গ্রুপের সেরা দুইয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। গ্রুপ বি'তে ৪ ম্যাচ শেষে ১ পয়েন্ট নিয়ে চার দলের মধ্যে চতুর্থ তারা। শেষ দুই ম্যাচে নিজেদের জয়ের পাশাপাশি কসভোর দুই ম্যাচে হার আর স্লোভেনিয়ার অন্তত একটি হারই শুধু সুইডেনকে সেরা দুইয়ে নিয়ে আসতে পারে। অন্যদিকে নর্দান আয়ারল্যান্ড ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ 'এ'তে তৃতীয় স্থানে। শেষ দুই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ যথাক্রমে দুই ও চার নম্বরে থাকা স্লোভাকিয়া ও লুক্সেমবার্গ।
তবে, উয়েফার জটিল কোয়ালিফাইং সিস্টেমের কারণে শেষ পর্যন্ত সান মারিনো প্লে-অফে জায়গা পেয়ে গেলেও তাদের জন্য বিশ্বকাপের রাস্তা পাড়ি দেয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ প্লে-অফে সান মারিনোকে দুটি ম্যাচ খেলতে হবে উচ্চ র্যাঙ্কিংধারী দলের বিপক্ষে। সেই দুই ম্যাচ জিতে সান মারিনো বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারলে সেটি হবে ক্রীড়া ইতিহাসের অন্যতম অলৌকিক অর্জন।

১ সপ্তাহে আগে
৪







Bengali (BD) ·
English (US) ·