শিশু বিকাশে পিছিয়ে খুলনা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ভয়াবহ চিত্র

১ সপ্তাহে আগে
খুলনা অঞ্চলে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া শিশু, শিশু শ্রমিকের সংখ্যা, নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যঝুঁকির মতো সূচকগুলোতে উদ্বেগজনক চিত্র ধরা পড়েছে সাম্প্রতিক জরিপে। শিশুদের শিক্ষায় অংশগ্রহণ কমে যাওয়া, শ্রমবাজারে অল্প বয়সেই যুক্ত হয়ে পড়া, নিরাপদ পানি ও হাইজিন সুবিধার সংকট সব মিলিয়ে খুলনা বিভাগের শিশুদের ভবিষ্যত একটি বড় ধরণের ঝুঁকির মুখোমুখি।

খুলনা অঞ্চলে শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিয়ে সাম্প্রতিক বহুমাত্রিক জরিপে ভয়াবহ বাস্তবতা উঠে এসেছে। পরিসংখ্যান বলছে, এই অঞ্চলের শিশুদের বড় একটি অংশ এখনো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, যা তাদের ভবিষ্যৎ বিকাশের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

শিশুদের বড় একটি অংশ শিক্ষার বাইরে। ছবি: সময় সংবাদ 

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ইউনিসেফের সহযোগিতায় ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত (২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন) এক বিস্তৃত মাঠজরিপ পরিচালনা করে। জরিপটি দেশের সকল বিভাগ ও জেলার প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনার ভিত্তিতে করা হয়েছে, যেখানে অঞ্চলভিত্তিক শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন, পুষ্টি, শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

 

এই জরিপ অনুযায়ী, খুলনা বিভাগে ৯.৮ শতাংশ শিশু বর্তমানে শিশুশ্রমে যুক্ত, যা জাতীয় গড় (৯.২ শতাংশ) থেকে বেশি। ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ১০ শতাংশ স্কুলে যায় না, যা এ অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতাকে আরও স্পষ্ট করে। শিক্ষা বিভাগ বলছে, শিক্ষায় ঝরে পড়া শিশুদের ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: খুলনায় দুই শিশুসহ একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা

 

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহিদুল ইসলাম জানান, শিশুদের স্কুলমুখী করতে আমরা স্কুল-ভিত্তিক সচেতনতা বাড়িয়েছি। ঝরে পড়া রোধে শিক্ষক–অভিভাবক সমন্বয় জোরদার করা হচ্ছে এবং প্রতিটি স্কুলকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষকরা প্রয়োজনে বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আগ্রহী করে তুলছে।

 

শুধু শিক্ষা নয়, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও খুলনা বিভাগ বেশ পিছিয়ে।

 

জরিপ বলছে, খুলনা বিভাগের ৫.৪ শতাংশ শিশু সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত, যেখানে জাতীয় গড় মাত্র ২.৪ শতাংশ। এছাড়া ২১.৪ শতাংশ শিশু বেসিক স্যানিটেশন সুবিধা পায় না।

 

শিশুদের রক্তে সীসার উপস্থিতি নিয়ে পাওয়া তথ্য আরও উদ্বেগজনক। ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ১৭.৮ শতাংশ শিশুর রক্তে সীসার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। যা তাদের দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক-মানসিক বিকাশে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। জরিপে আরও উঠে এসেছে খুলনা বিভাগের ৬৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছরের আগেই, যা জাতীয় গড় ৫৬ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। শিশুবিবাহের এই হার শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অধিকারকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

 

ইউনিসেফের খুলনা বিভাগীয় প্রধান মো. কাওসার হোসেন বলেন, খুলনা অঞ্চলে শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি–বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া স্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা সরকারকে প্রযুক্তিগত ও কার্যকর সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি, যাতে শিশুরা নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে।

 

আরও পড়ুন: শিশু জিসান হত্যা: খুলনায় অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর-আগুন

 

শিশু অধিদফতর খুলনার জেলা কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ঝরে পড়া রোধ, শিশুশ্রম কমানো, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, এবং শিশুস্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে মাঠপর্যায়ে আমরা নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পরিবার ও সমাজের সচেতনতা এখনো বড় বাধা হয়ে আছে।

 

যদিও অধিকাংশ সূচক উদ্বেগজনক, তবুও একটি ইতিবাচক বিষয় হলো খুলনায় শিশু মৃত্যুর হার ২১ শতাংশ, যা জাতীয় গড় ৩৩ শতাংশের তুলনায় কম। এটি এ অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবার কিছু উন্নয়নকে নির্দেশ করে।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন