শহীদ ওয়াসিমের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি, থামেনি মা-বাবার বুকচাপা কান্না

৩ সপ্তাহ আগে
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় পুলিশের গুলি ও সরকারি দলের দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন ছাত্রদল নেতা ও তৎকালীন আন্দোলনের সম্মুখ সারির সৈনিক ওয়াসিম আকরাম। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। শহীদ হয়েছিলেন দীর্ঘ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের দ্বিতীয় যোদ্ধা হিসেবে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও সন্তান হারানোর বেদনা এখনও বুকচাপা কান্না হয়ে রয়ে গেছে ওয়াসিমের বাবা-মা শফিউল আলম ও জোসনা বেগমের হৃদয়ে।

ওয়াসিমের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীর ঠিক আগের দিন মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন সময় সংবাদ। বাবা শফিউল আলম ও মাতা জোসনা বেগম জানান, তারা শুধু সন্তানের হত্যার ন্যায়বিচার চান না; চান, তার আত্মত্যাগ যেন স্বপ্নের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় পরিণত হয়।


শহীদ ওয়াসিম আকরাম ছিলেন পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা গ্রামের সন্তান। গ্রামের শান্ত পরিবেশেই বেড়ে ওঠা ওয়াসিম স্কুলজীবনেই জড়িয়ে পড়েন ছাত্রদলের রাজনীতিতে।


২০১৭ সালে মেহেরনামা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের বাকলিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে, যেখানে গত বছর অনার্স শেষ করেন।


রাজনীতির পাশাপাশি ছিলেন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহী। ওয়াসিম ছিলেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ছাত্র রাজনীতির প্রতিটি কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তার।


২০২৪ সালের জুলাই থেকে দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চরমে ওঠে। চট্টগ্রামও রূপ নেয় অগ্নিগর্ভ নগরীতে। ১৬ জুলাই বিকেলে ষোলশহরে পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত হন ওয়াসিম। মৃত্যু হয় তার। ঘটনার দুদিন আগেই, সৌদি আরব প্রবাসী বাবার সঙ্গে শেষ কথা হয় তার, বাড়িতে আসবেন বলে টাকা চান বাবার কাছে। সেই কথাই ছিল তার জীবনের শেষ কথা বাবার সঙ্গে।


ওয়াসিমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। মাত্র ২০ দিন পর ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটে। শুরু হয় নতুন প্রত্যাশার সূচনা।


আরও পড়ুন: ১৬ জুলাই ২০২৪: আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ ৬ শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয় স্বাধীন দেশের রাজপথ


ওয়াসিমের বন্ধু, সহপাঠী ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা তাকে মনে করেন ‘চেতনার অগ্নিমশাল’ হিসেবে। বন্ধুবৎসল, অমায়িক, সদা হাস্যোজ্জ্বল ওয়াসিম ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি সমাজ ও সংস্কৃতিতেও রাখতেন পদচিহ্ন।


তার মৃত্যু আজও অনেকের কাছে এক ব্যক্তিগত শোক এবং জাতিগত ক্ষতির স্মারক। মা জোসনা বেগম এখনও তার ছবি বুকে নিয়ে স্মৃতির পাতায় ফিরে যান।


বাবা শফিউল আলম বলেন, ‘আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। আজও সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। বিচারও হয়নি ওয়াসিমের হত্যার।’


তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। যারা আজ ক্ষমতায়, তারা যদি শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ না করেন, তাহলে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।


আরও পড়ুন: শহীদ ওয়াসিমের মৃত্যুবার্ষিকীতে কবর জিয়ারত কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের


শহীদ ওয়াসিমের মৃত্যুবার্ষিকীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল মেহেরনামায় তাঁর কবর জিয়ারত করেন এবং পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

 

নাছির উদ্দীন বলেন, 'যেভাবে ওয়াসিমকে স্মরণ করা উচিত ছিল, সেভাবে স্মরণ করেনি সরকার। এটি আমাদের হতাশ করেছে। ওয়াসিমকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করছে সরকার। তাই সবখানেই তিনি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।'

 

ছাত্রদলের নেতারা জানান, শহীদ ওয়াসিমের আত্মত্যাগের প্রকৃত মর্যাদা দিতে হলে কেবল হত্যার বিচার নয়, তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশই হবে শহীদ ওয়াসিমের স্বপ্নপূরণের শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন