রোববার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হবে ফরিদা পারভীনের মরদেহ

৩ সপ্তাহ আগে
কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীনের মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন জন্য রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে ইমাম নাহিল।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ইমাম নাহিল সাংবাদিকদের বলেন,  মায়ের মরদেহ রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যে রাখা হবে শহীদ মিনারে।

 

এরপর বেলা ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নেয়া হবে। সেখানে বাদ জোহর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর রওনা হওয়া হবে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে বলেও জানান তিনি।

 

ইমাম নাহিল বলেন, মাকে আমরা কুষ্টিয়াতে দাফন সম্পন্ন করব, তার ইচ্ছা অনুযায়ী।

 

তার মেয়ে জিহান ফারিয়া বলেন, মা মর্যাদা নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তার শেষ ইচ্ছে ছিল কুষ্টিয়া যাওয়ার। বাবা-মার কবরের পাশে দাফন করার শেষ ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তিনি।

 

ফরিদা পারভীনে দ্বিতীয় স্বামী গাজী আব্দুল হাকিম জানান, বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন এবং শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা এবং জানাজা হোক, সম্মান পাক এটাই আমার চাওয়া।

 

তাকে নিয়ে কিছু কথা- 

 

ফরিদা পারভীনের গানের হাতেখড়ি মাগুরা জেলায়। সেটা ১৯৫৭-৫৮ সালের কথা, তখন তিনি মাত্র চার-পাঁচ বছরের মেয়ে। সে সময় মাগুরায় তাঁকে গানে হাতেখড়ি দিয়েছিলেন ওস্তাদ কমল চক্রবর্তী। এরপর যেখানেই তিনি থেকেছেন, সেখানেই বিভিন্নজনের কাছে গানের তালিম নিয়েছেন। স্বরলিপি দিয়ে নজরুলের গান হারমোনিয়ামে ও কণ্ঠে তোলার কাজটি তিনি ওস্তাদ মীর মোজাফফর আলীর কাছেই প্রথম শেখেন। ১৯৬৮ সালে তিনি রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত নজরুলসংগীতশিল্পী নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর লালন সাঁইজির গানের সঙ্গে ফরিদার পারভীনের যোগাযোগ, তখন তিনি কুষ্টিয়াতে থাকতেন। সেখানে তাদের পারিবারিক বন্ধু ছিলেন মোকছেদ আলী সাঁই। ১৯৭৩ সালে ফরিদা পারভীন তার কাছেই ‘সত্য বল সুপথে চল’ গান শেখার মাধ্যমে লালন সাঁইজির গানের তালিম নেন। মোকছেদ আলী সাঁইয়ের মৃত্যুর পর খোদা বক্স সাঁই, ব্রজেন দাস, বেহাল সাঁই, ইয়াছিন সাঁই ও করিম সাঁইয়ের কাছে লালনসংগীতের তালিম নেন।

 

স্বাধীনতার পর ফরিদা পারভীন ঢাকায় চলে আসেন। তার গাওয়া গান দিয়ে ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস শুরু হয়। মোকছেদ আলী সাঁই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ছিলেন। তিনি ফরিদা পারভীনকে ঢাকায় কিছু লালনের গান গাইতে বলেন। তার অনুরোধে তিনি তখন ‘খাঁচার ভিতর’, ‘বাড়ির কাছে আরশি নগর’ গানগুলো গাইলেন। তখন তিনি কুষ্টিয়া থেকে এসে মোকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে লালনের গান শিখে ট্রান্সক্রিপশনে রেকর্ডিং করতে থাকেন। ফরিদা পারভীনের প্রথম স্বামী প্রখ্যাত গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী আবু জাফর। তার সেই সংসারে রয়েছে তিন ছেলে ও এক মেয়ে; জিহান ফারিয়া, ইমাম নিমেরি উপল, ইমাম নাহিল সুমন ও ইমাম নোমানি রাব্বি।

 

আরও পড়ুন: সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন মারা গেছেন

 

লালন সাঁইজির গানের বাণী ও সুরকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে ফরিদা পারভীনের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বদরবারেও তিনি লালন সাঁইয়ের বাণী ও সুরকে প্রচারের কাজে নিয়েজিত ছিলেন। জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আরও বহু দেশে লালনসংগীত পরিবেশন করেছেন। লালনসংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক পান ফরিদা পারভীন। এর বাইরে ১৯৯৩ সালে ‘অন্ধ প্রেম’ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ‘নিন্দার কাঁটা’ গানটির জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী (নারী) হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ২০০৮ সালে জাপানের ফুকুওয়াকা পুরস্কার লাভ করেন। লালনশিল্পী হিসেবেই সুপরিচিত হন, তাঁর কণ্ঠে বেশ কটি আধুনিক ও দেশের গান জনপ্রিয় হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘তোমরা ভুলে গেছ মল্লিকাদির নাম’, ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’ ইত্যাদি।

 

প্রসঙ্গত, বরেণ্য লোকসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর। ১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্ম হয় ফরিদা পারভীনের। গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে ফরিদা পারভীনের পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়।

 

ফরিদা পারভীনের বেড়ে ওঠাটা একেবারে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রামে নয়। কারণ, তাঁর বাবা মেডিকেলে চাকরি করতেন আর তাঁর চাকরির বদলির সুবাদে বিভিন্ন সময়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ফরিদাকেও বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়েছে। এ কারণে ফরিদার বেড়ে ওঠায় বিভিন্ন জায়গার ছাপ পড়েছে। ফরিদা পারভীনের স্কুলজীবন কেটেছে বিভিন্ন শহরে। তবে তাঁর স্কুলজীবনের শুরুটা মাগুরায়। একাধিক স্কুলে পড়াশোনা শেষে তিনি কুষ্টিয়ার মীর মশাররফ হোসেন বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭৪ সালে কুষ্টিয়া গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি এবং একই কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেন।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন