খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ১৮ নভেম্বর বরগুনার কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালে এ অস্ত্রোপচার করা হয়। হাসপাতালটিতে কোহিনুর বেগমের জরায়ুতে অপারেশন করেন ডা. ফারহানা মাহফুজ। তার সাথে ছিলেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাফিয়া পারভীন। অপারেশনের পর চিকিৎসকরা 'সফল অস্ত্রোপচার' বললেও, কোহিনুর বেগমের পেটে রয়ে যায় ৭ ইঞ্চি সাইজের একটি কাঁচি। মেডিকেলের ভাষায় এটিকে বলা হয় ‘আর্টারি ফরসেপ’।
কোহিনুর বেগমের স্বজনরা জানান, অস্ত্রোপচারের পর পেটে কাঁচি থাকার কারণে ক্রমেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে কোহিনুর বেগমের। সাত মাস পর বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা তার পেটে কাঁচি শনাক্ত করেন। পরে গত ১৮ জুন অস্ত্রোপচার করে সেটি অপসারণ করা হয়। ততদিনে কোহিনুর বেগমের খাদ্যনালীতে পচন ধরে যায়, ফলে অপারেশনের সময় তার একটি অংশ কেটে ফেলতে হয়। বর্তমানে তিনি পেটের বাইরে সংযুক্ত ব্যাগের মাধ্যমে মল ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ ঘটনায় চিকিৎসকদের অবহেলা ও গাফিলতিকে দায়ি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন কোহিনুর বেগমের স্বজনরা। লিখিত অভিযোগ দেন বরগুনার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে।
আরও পড়ুন: ‘অস্ত্রোপচারে বের হয়েছে ২ শতাধিক ছররা গুলি, এখনো রয়ে গেছে অনেক’
কোহিনুর বেগমের মেয়ে ফাহিমা বলেন, আমার মাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে চিকিৎসকের এই গাফিলতি। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। আমরা মায়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি।
জামাতা হুমায়ুন বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন আর কোনো রোগী এমন ভোগান্তির শিকার না হন, প্রশাসনের উচিত কড়া পদক্ষেপ নেয়া। আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা চাই।’
মামা আব্দুল আউয়াল বলেন, এটি নিছক ভুল নয়, এটি অপরাধ। আমরা এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. ফারহানা মাহফুজ ও ডা. সাফিয়া পারভীনকে হাসপাতালে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী মো. ফজলুল হক (মন্টু) বলেন, এ ঘটনার সকল দায়দায়িত্ব নিতে হবে চিকিৎসকদের। কারণ তারা অপারেশন করেছেন এবং তাদের গাফিলতির কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: অস্ত্রোপচারে কয়েদির পেট থেকে বের হলো মোবাইল!
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত এবং বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনা হবে।
]]>