সংশ্লিষ্টরা জানান, বছরের পর বছর এই দুর্ভোগ নিরসনে নানা প্রকল্প নিলেও ভোগান্তি কমেনি। পাউবোর সুনিদিষ্ট পরিকল্পনাকেই দুষছেন ভুক্তভোগীরা। এমন পরিস্থিতিতে ভবদহ এলাকা পরিদর্শন করেছেন চায়নার বিশেষজ্ঞ একটি দল। তাদের মতামতেই ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগ নেবে সরকার।
এ দিকে সরকারের আশ্বাসের পরেও জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজের দীর্ঘসূত্রতায় এবারও জলাবদ্ধতার বিপর্যয় দেখা দিয়েছে দাবি ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির। এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত টিআরএম (জোয়ারাধার) চালু করার দাবি জানান।
ভবদহ অঞ্চল যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত। এই এলাকার পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর মাধ্যমে। তবে পলি পড়ে নদীগুলো নাব্যতা হারানোয় পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভবদহের ৫২ বিলে জলাবদ্ধতা, তলিয়ে গেছে শতাধিক গ্রাম
যশোরের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটির আবহাওয়া বিভাগ জানায়, গত জুনে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২৯৯ মিলিমিটার। চলতি জুলাইয়ের ২৯ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৭৫০ মিলিমিটার। এতে ভবদহ এলাকার ৫২টি বিল প্লাবিত হয়েছে। পানি উপচে আশপাশের গ্রামে ঢুকছে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির তথ্যমতে, ভবদহ অঞ্চলে ইতিমধ্যে মনিরামপুরের কুলটিয়া ইউনিয়নে ১৪টি গ্রাম, চলিশা ইউনিয়নে ৫ টি, সুন্দলী ইউনিয়নে ১০টি, পায়রা ইউনিয়নে ৫টি হোগলাডাঙ্গা ইউনিয়নে ৮টি নেহালপুর ইউনিয়নে ৩টি গ্রামসহ মোট ৪৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রতিদিন সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ি ঘর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফসলের জমি উপাসনালয় পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের দিলীপ বিশ্বাসের (৪০) বাড়ির উঠানে হাঁটুপানি।
আরও পড়ুন: যশোরের দুঃখ ভবদহ পরিদর্শনে তিন উপদেষ্টা, খননের দায়িত্বে সেনাবাহিনী
তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির সঙ্গে ওপরের দিকের জল চাপ দেওয়ায় জল বেড়েই চলেছে। উঠোনে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছি। ঘর থেকে সাঁকো দিয়ে বের হচ্ছি। জল আরেকটু বাড়লে ঘরে ঢুকবে।’
একই গ্রামের সুভাষ বিশ্বাস বলেন, ‘খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। যেভাবে জল বাড়ছে, তাতে এবারও জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নেবে।’
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমডাঙ্গা খাল ৮১ কিলোমিটার নদী খনন এবং টিআরএম করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করলেও তার দীর্ঘসূত্রিতা জন্য আবারও বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি ভবদহ স্লুইচগেটের ২১ ভেন্টের চারটি থেকে এখন ছয়টি গেট খোলা। বাকি গেটগুলি সব বন্ধ, সে গেট গুলি খুলে দিলে দ্রুত পানি বের হয়ে যাবে এবং সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে মানুষ রক্ষা পাবে। এ সকল কাজের দীর্ঘসূত্রিতা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্ভোগ মোকাবেলায় দ্রুত সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা হয়ে সামনে এসেছে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের কাজ, নদী খনন ও টি আর এম বাস্তবায়নের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করনীয় নির্ধারণের জন্য আগামী ৪ আগস্ট বিকাল ৩টায় মসিহাটি স্কুলে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন: টানা বৃষ্টিতে খুলনায় জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে নগরবাসী
এ দিকে এমন পরিস্থিতির মধ্যে মঙ্গলবার ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইস গেট পরিদর্শন করেছেন চীনা বিশেষজ্ঞ দল। দুপুরে উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের ভবদহ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২১ ভেন্ট স্লুইস গেট পরিদর্শন করেন তারা।
পরিদর্শনকালে চীনা বিশেষজ্ঞ দলে ছিলেন: চিফ প্লানার ঝু জমিং, শিন ইগোশিন, সহকারী চিফ ইঞ্জিনিয়ার হুং হুজিওং, ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার জাং ঝিজান, ডেং ইউজি, চেইন ইয়াং। এ সময় উপস্থিত ছিলেন: যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-খ) রাজিবুল ইসলাম, অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম শীল, অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আলীম প্রমুখ।
যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বর্তমান সরকার আন্তরিক। যে কারণে চীনা বিশেষজ্ঞ দল আজ ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শনে এসেছেন। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয়ে সরেজমিনে কথা বলছেন তারা। পরিদর্শন সম্পন্ন হলে তারা তাদের মতামত সরকার বরাবর উপস্থাপন করবেন। সেই অনুযায়ী এবার স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হবে।’
]]>