ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যাওয়া দ্বাদশ সংসদের ৩১ জন সংসদ সদস্যের নামে আমদানি করা গাড়িগুলো গত নয় মাসের বেশি সময় ধরে বিক্রির নানামুখী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। একটি গাড়ি নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা থাকায় বাকি ৩০টি গাড়ি একবার নিলামেও তোলা হয়েছিল।
এমপি কোটায় আনা এসব গাড়ির বাজারমূল্য অন্তত ১২ কোটি টাকা। নিলামে ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। তবে প্রথম নিলামে এসব গাড়ির দর হাঁকা হয়েছে মাত্র ১ থেকে ৫ লাখ টাকা। আর তাই প্রকৃত রাজস্ব আদায়ের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ এসব গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রে এখন কৌশল পাল্টাচ্ছে।
এরমধ্যে ২১টি গাড়িতে নিলাম বিড হলেও ৯টি গাড়ি কিনতে আগ্রহী কেউ ছিল না। শুধু একটি গাড়ি সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা প্রস্তাব করলেও বাকি সবগুলো গাড়ির দর ছিল ১ থেকে ৩০ লাখ টাকার মধ্যে। আর তাই প্রথম নিলামের পর দ্বিতীয় নিলাম স্থগিত করা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার (নিলাম) সাকিব হাসান বলেন, ‘যদি ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকার গাড়ি ১ থেকে ৩০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়, তাহলে সরকারের কোনো রাজস্বই আদায় হবে না। এজন্য এসব গাড়ি দ্বিতীয়বার নিলামে না তুলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামত পেলেই দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
আরও পড়ুন: এমপি কোটায় আনা বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর
আইন অনুযায়ী, দ্বিতীয় নিলামে প্রথম নিলামের চেয়ে দর বেশি উঠলে বিডারের বিপরীতে গাড়ি হস্তান্তর করতে বাধ্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। এক্ষেত্রে সরকার অন্তত দেড়শ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় রাজস্ব আদায়ে প্রকৃত মূল্য ঠিক রেখে গাড়ি বিক্রির উপায় খুঁজতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বারস্থ হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এনবিআর থেকে বলা হয়েছে-দ্বিতীয় নিলাম হলেও যেন গাড়িগুলো ন্যূনতম একটি নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হয়। এনবিআরের এ নির্দেশনার আলোকে এরই মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
এদিকে, বন্দরসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থাও এমপি কোটায় আমদানি করা গাড়ি কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে একক হিসেবে বন্দরের ৫টি গাড়ি কেনার আবেদন বর্তমানে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় হয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিবেচনায় রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘অকশন মূল্যেই আমরা গাড়িগুলো বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য কিনতে চাই। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এরই মধ্যে এনবিআরে পাঠানো হয়েছে। এখন বিষয়টি এনবিআরের বিবেচনাধীন।’
দ্বাদশ সংসদের সদস্যরা গত বছরের জুন-জুলাই মাসে বিনাশুল্কে জাপান থেকে এসব গাড়ি আমদানি করেছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতন হয়ে গেলেও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে গাড়িগুলো দেশে এসে পৌঁছায়। আইনি জটিলতায় এসব গাড়ি ছাড় না হওয়ায় নিলামে বিক্রির জন্য কাস্টমসের কাছে বাই পেপার হস্তান্তর করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
]]>