সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দলের কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় কোচ জাবি আলোনসোর কঠোর পরিচালনানীতি ও দূরত্বপূর্ণ আচরণের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। কেউ কেউ নাকি এমনও বলছেন, 'সে ভাবে, সে নাকি পেপ গার্দিওলা।' বার্সেলোনা ও জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে টানা বড় জয় সত্ত্বেও, আলোনসোর কঠিন নিয়ম-কানুন ও কঠোর ট্রেনিং পদ্ধতি নিয়ে নাকি ড্রেসিংরুমে অসন্তোষ বাড়ছে।
আলোনসো গত জুনে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন—কার্লো আনচেলত্তির আমলের মতো কিছুই থাকবে না সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। পুরোনো অভ্যাস? বাদ। অতিরিক্ত জিম সেশন থেকে শুরু করে ট্রেনিং গ্রাউন্ডে শুধুমাত্র অপরিহার্য কর্মীদের প্রবেশ—সবকিছুর ওপর নতুন নিয়ম। ম্যাচের আগে বা হাফটাইমে ড্রেসিংরুমে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। দল ঘোষণার গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা হচ্ছে। এমনকি খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত সহকারীরাও এখন সীমাবদ্ধতার মধ্যে। উদ্দেশ্য একটাই—ফোকাস ও প্রাইভেসি বজায় রাখা। তবে সবাই এই কড়াকড়ির সঙ্গে অভ্যস্ত নন।
তবুও মাঠে ফল ভালো। কিন্তু ফুটবল শুধু ফলাফলের খেলা নয়—এটা ব্যক্তিত্ব, অভ্যাস ও আরামেরও বিষয়। কিছু খেলোয়াড় এই নতুন সংস্কৃতিতে মানিয়ে নিচ্ছেন, কিন্তু অনেকেই পারছেন না।
আরও পড়ুন: টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের পর রোনালদোর আবেগঘন বার্তা
দলের ভেতরের এক সূত্র 'দ্য অ্যাথলেটিক'কে জানিয়েছে, 'তাদের মধ্যে অনেকে এত সাফল্য পেয়েছে এইসব কড়াকড়ি ছাড়া, তাই এখন যখন এসব চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, বলে মনে হচ্ছে তাদের। সে ভাবে, সে পেপ গার্দিওলা, কিন্তু এখনো সে কেবল শাবি।'
এই বাক্যটি নাকি এখন ড্রেসিংরুমে প্রায়ই শোনা যাচ্ছে—কিছুটা শ্রদ্ধা, কিছুটা বিদ্রুপ। বার্সেলোনার বিপক্ষে বদলি হওয়ার পর ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ক্ষুব্ধভাবে মাঠ ছাড়াও সেই টানাপোড়েনের প্রতিফলন ছিল, যদিও সমস্যাটা তার চেয়ে গভীরে।
কেউ কেউ মনে করছেন, আলোনসোকে 'সহজে পাওয়া যায় না' বা তিনি 'অতিরিক্ত দূরত্ব রাখেন'। আনচেলত্তির উষ্ণ, খোলামেলা ব্যবহারের সঙ্গে এই তুলনা অনেককে আরও অস্বস্তিতে ফেলেছে। আলোনসো শৃঙ্খলা ও ফোকাস বাড়াতে যা করছেন—বিশেষায়িত ট্রেনিং, কঠোর নিয়ম, সীমিত প্রবেশাধিকার—সবই পারফরম্যান্স উন্নতির জন্য, কিন্তু এতে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ বদলে গেছে।
তবুও, তার কৌশল অন্তত আংশিকভাবে কাজ করছে। রিয়াল মাদ্রিদ বর্তমানে লা লিগার শীর্ষে। চ্যাম্পিয়নস লিগেও ফর্ম ভালো। তরুণ খেলোয়াড় যেমন: আরদা গুলের, ডিন হুইসেন, আলভারো ক্যারেরাস, ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনোরা নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছেন। নিয়মিত রোটেশনও সবাইকে যুক্ত রাখছে। আলোনসোর সহকারী সেবাস্তিয়ান পারিয়া, ফিটনেস কোচ ইসমায়েল কামেনফোর্তে এবং বিশ্লেষক আলবার্তো এনসিনাস ও বেনাত লাবাইয়েন—সবাই মিলে ধৈর্যের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সফর বাতিল আফগানিস্তান-মিয়ানমারের, নতুন প্রতিপক্ষ নেপাল
সূত্রটি আরও জানায়, 'তারা জানে, এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে এবং ধৈর্য দরকার, যাতে দলটি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারে।' কেউ কেউ মানিয়ে নিচ্ছেন, কেউ এখনও বিরক্ত। তবে আলোনসো নিজের শৃঙ্খলার নীতি থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছেন না। আপাতত এই টানাপোড়েনকে তিনি সমস্যার অংশ বলেই দেখছেন, সংকট নয়।
রিয়াল মাদ্রিদ সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিটি পদক্ষেপ মিডিয়ার নজরে। তাই আলোনসোর কর্তৃত্ব আর খেলোয়াড়দের আস্থার মধ্যে ভারসাম্য রাখা এখন তার ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। সিনিয়র খেলোয়াড়দের অসন্তোষ যদি বেড়ে যায়, তবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করাই হবে মূল কাজ। আগামী শনিবার (১ নভেম্বর) লা লিগায় ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মাঠের ভালো পারফরম্যান্স দিয়েই হয়তো আলোনসো এই অস্থিরতার জবাব দিতে চাইবেন।

৩ সপ্তাহ আগে
৪







Bengali (BD) ·
English (US) ·