ড্রোন ও সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে সন্ত্রাসীদের মহড়া দিতে দেখা যায়। গত এক মাসে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ইসলামপাড়া বালুঘাটের দখল নিতে কয়েকদফা কাকন বাহিনী স্পিডবোর্ডে বন্দুক নিয়ে ধাওয়া করে বালুবাহী নৌকাগুলোকে। এই বালুঘাটের দখল নিয়ে কয়েক দফা সংঘর্ষে ৮ জনসহ বিভাগের অন্যান্য জেলার বালুঘাটে আরও ২০ জন আহত হয়েছেন। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের নেই কোনো পদক্ষেপ। পাবনা জেলায় বৈধ মাত্র ৩টি ঘাট থাকলেও প্রভাবশালীরা প্রায় ৫০টি ঘাট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ঝুঁকিতে বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
এদিকে, রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠে শ্যামপুর বালুঘাট। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে লিজ ছাড়াই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও তা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন সিহাব। অভিযোগ উঠেছে, ড্রামটাক ভর্তি ৫ হাজার টাকার বালু এখন বিক্রি করছেন ৯ হাজার টাকায়। বাধ্য হয়ে ক্রেতাদের অতিরিক্ত দামে বালু কিনতে হচ্ছে। এছাড়া শ্যামপুর বালুঘাটে বেপরোয়াভাবে ট্রাক যাতায়াতের কারণে রাস্তার পাশের অধিকাংশ বাড়িতেই ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় সিহাবের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না এলাকাবাসী। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জেলা প্রশাসন মাসখানেক আগে মধ্যরাতে লোক দেখানো অভিযান চালালেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেই বালু উত্তোলন করে এই চক্রটি। বালুঘাটের ইজারা নিয়ে কথা বলতে সিহাবকে মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন: রাতের আঁধারে কৃষি জমি হচ্ছে পুকুর, নেপথ্যে কী?
এছাড়া বর্ষা মৌসুমে পদ্মায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলতলা ঘাটে বালু উত্তোলন করতে না পেরে পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন ইজারাদার মান্নাফ। এতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত একর ফসলি জমি। আর বিদিরপুর, প্রেমতলী ঘাট থেকে বালু উত্তোলনের পর খেয়ালখুশিমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ইজারাদার মোখলেছুর রহমান মুকুল। অধিকাংশ ইজারাদার নির্ধারিত স্থানের বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন করছেন বলে অভিযোগ আছে। এতে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধের নানা অংশ। এ নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের।
এদিকে অধিকাংশ বালুঘাটের ইজারাদার চড়া দামে বালু ও মাটি বিক্রি করার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের ভাষ্য, নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করতে হচ্ছে তাদের। খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বাড়তি নিচ্ছেন তারা।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মাটি বিক্রির কারণে চরম হুমকির মুখে পড়েছে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও পাবনার শহর রক্ষা বাঁধ। এরমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমতলা, নগরীর পঞ্চবটী থেকে তালাইমারি, চারঘাটের টাঙ্গন ও বাঘার বেশ কিছু পয়েন্টে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে চলছে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনের মহোৎসব। নদীতীর থেকে অনিয়ন্ত্রিত বালু ও মাটি উত্তোলনের কারণে হুমকিতে পড়েছে নদী রক্ষা বাঁধ, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি। জেলায় দুটি বালুমহলের ইজারা থাকলেও অন্তত ৬ থেকে ৭টি পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
অবৈধ বালুঘাটগুলো বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা জানান রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। তিনি জানা, ৮টি জেলায় মোট বৈধ বালুঘাট রয়েছে ৮০টি, আর অবৈধ ঘাটের সংখ্যা দেড়শোর বেশি।
]]>