রাজধানীর সড়ক উন্নয়ন যেন গলার কাঁটা, নীতিমালা ‘কাগুজে বাঘ’

৩ সপ্তাহ আগে
রাজধানীর সড়কে উন্নয়নমূলক কাজ যেন এখন নগরবাসীর জন্য গলার কাঁটা। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি–উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র দেদার চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। জলাবদ্ধতা নিরসন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নেটওয়ার্ক সংস্কারসহ নানা অজুহাতে সড়ক খোঁড়া হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজ শেষ না করেই পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন নগরবাসী।

খনন নীতিমালা না মানা, সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা এবং ঠিকাদারদের দায়হীনতা ভোগান্তিকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। নগর কর্তৃপক্ষও স্বীকার করছে, প্রকল্পের মেয়াদ ও বরাদ্দ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেক সময় বাধ্য হয়েই এমন কাজের অনুমতি দিতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল জরিমানা নয়, জনভোগান্তি সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনার সময় এসেছে।


মিরপুর-১১-তে একটি সড়কের স্থানীয়দের দেয়া নাম ‘প্যারিস রোড’। নাম শুনে ফ্রান্সের রাজধানীর কোনো সড়ক মনে হতে পারে। তবে এই রাস্তা এখন দেখতে যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো এলাকার মতো। মাসখানেক ধরে খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে পুরো সড়ক, পাশে ড্রেনের আবর্জনা জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।


এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, অনেকটা বন্দি অবস্থায় দিন কাটছে তাদের। বের হতে গেলেই কাদা, ধুলা আর খানাখন্দে পা হড়কানোর ঝুঁকি। একজন পথচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘চলাফেরা-কাজকর্ম সবদিক দিয়েই আমাদের অসুবিধা হয়। এখানে বসবাস করা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
 

আরও পড়ুন: নির্মাণ কাজের ধীরগতিতে দশানী-রামপাল-মোংলা সড়কে দুর্ভোগ


আরেকজন বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই রাজধানীর চিত্র হতে পারে না। ড্রেনের মধ্যে ছোট ছোট বাচ্চারা পড়ে যায়। কোনো প্রটেকশন নেই। ড্রেন না পরিষ্কার করলে যতই রাস্তা করা হোক, কোনো লাভ হবে না।’


২০১৯ সালে প্রণীত ঢাকা মহানগরী সড়ক খোঁড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে: একটি সড়কের পুরোটা একসঙ্গে খোঁড়া যাবে না, ১৫ দিনের ধাপে ধাপে কাজ করতে হবে, ধুলাবালি রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং খনন এলাকা সতর্কীকরণ ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখতে হবে।


কিন্তু মিরপুর-১১, তেজগাঁও, বাসাবোসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এসব নীতিমালা মানার কোনো চিহ্ন নেই। নীতিমালা প্রণয়নের পাঁচ বছর পার হলেও তা কার্যত ‘কাগুজে বাঘ’ হয়ে আছে।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যাদের কাজ দিয়ে থাকি, সেই ঠিকাদারদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলি। না করলে জরিমানার বিধান আছে। তবে আমাদের পরিকল্পনায় কিছু ঘাটতি আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।’


অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ড্রেনেজ নেটওয়ার্কটা ঠিক করতে হবে। এটা করতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে। তবে বর্ষাকালে যাতে সড়ক কাটা না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি।’
 

আরও পড়ুন: ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪০ সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি, ভোগান্তির শেষ কবে?


বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কেবল জরিমানা বাড়িয়ে সমাধান হবে না। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘জনগণের পক্ষ থেকেও কেউ দেখার নেই, আবার করপোরেশনের পক্ষ থেকেও সরেজমিন তদন্ত হচ্ছে না। ঠিকাদাররাও জানেন এই নীতিমালা প্রতিপালন হবে না। জনভোগান্তি তো একটা বড় অপরাধ–তাহলে কেন তার জন্য কারাদণ্ড হবে না?’


স্থানীয়রা বলছেন, আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে চলা বিভিন্ন খাল খনন ও দখলমুক্ত করা গেলে উন্নয়ন কাজ চলাকালীন অবস্থায়ও দুর্ভোগ অনেকটা কমে আসবে।


তাদের দাবি: প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সমন্বয় জোরদার করা, কাজ ধাপে ধাপে শেষ করা এবং নীতিমালা বাস্তবায়নে কড়াকড়ি না আনলে রাজধানীর উন্নয়নমূলক কাজ নাগরিকদের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়েই থাকবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন