যশোর মেডিকেল কলেজের ৫শ’ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু

১ সপ্তাহে আগে
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুরু হয়েছে যশোর মেডিকেল কলেজের ৫শ’ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। এতে করে পূর্ণতা পাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম। পাশাপাশি এগিয়ে যাবে এই অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা।

গণপূর্ত বিভাগ বলছে, দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে কাজ। ২০২৮ জুনের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
 

২০১০ সালের আগস্ট মাসে যশোর মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর এক যুগেরও বেশি সময় পার হলেও ৫শ’ শয্যার হাসপাতালটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। অথচ যশোরের পরে স্থাপিত সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের যথাযথ শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ও যশোরসহ আশপাশের জেলার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল নির্মাণের জোর দাবি ছিলো। কিন্তু প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ জটিলতায় বার বার পিছিয়ে যায় প্রকল্পের কার্যক্রম। এ নিয়ে আন্দোলনও গড়ে ওঠে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত জুনে শুরু হয়েছে ৫শ' শয্যা হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। এতে সন্তুষ্ট আন্দোলনকারীরাসহ মেডিকেলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। নির্দিষ্ট সময়ে যেন প্রকল্পের কাজ শেষ হয় সেই দাবি এখন তাদের।


জাকারিয়া হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, একটি মেডিকেল কলেজের প্রাণ হচ্ছে হাসপাতাল। আমাদের মেডিকেল কলেজটা চালু হয়েছিল ২০১০ সালে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কলেজ ক্যাম্পাসে হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়নি। আমাদের তৃতীয় বর্ষ থেকে প্রতিদিন হাসপাতাল ওয়ার্ডে ব্যবহারিক ক্লাস থাকে। রোগীদের সাথে সামনাসামনি থেকে রোগব্যাধি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার প্রয়োজন হয়। এই ব্যবহারিক ক্লাসের মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।  যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: সরকার বিরোধী মশাল মিছিল, যশোরে সাবেক এমপি রনজিৎসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা


তিনি আরও বলেন, ‘এ ব্যবহারিক ক্লাস গুলো মূলত সন্ধ্যায় শুরু হয়। যে জন্য ক্যাম্পাসে হাসপাতাল থাকা জরুরি। আমাদের ক্যাম্পাসে হাসপাতাল না থাকায় আমরা প্রতিদিন ৬/৭ কিলোমিটার দূরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে ব্যবহারিক ক্লাস করি। এতে যাতায়াতের সমস্যা যেমন আছে তেমনি নিরাপত্তা নিয়েও শংকিত থাকতে হয়। সরকার শেষ অব্দি হাসপাতালটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা খুশি। আমরা চাই কোনরকম বাধা-বিপত্তি ছাড়া এই প্রকল্পের কাজ শেষ হোক।’


প্রজ্ঞা ইসলাম নামে অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে হাসপাতাল না থাকায় আমাদের আগে অনেক শিক্ষার্থী যশোর জেনারেল হাসপাতালে ব্যবহারিক ক্লাস করেছে। এখন হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে। তাহলে আমরা যারা প্রথম বর্ষে পড়ছি তারা ক্যাম্পাসের হাসপাতালেই ব্যবহারিক ক্লাস গুলো করতে পারবো। এতে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম পূর্ণতা পাবে। নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান হবে।’
 

যশোর মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, ‘যশোরবাসীর একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল যত দ্রুত সম্ভব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণ সম্পন্ন হোক। অবশেষে সেই কাজটি শুরু হয়েছে। হাসপাতালটির অভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে ব্যবহারিক ক্লাস গুলো করতে হচ্ছে। এজন্য যাতায়াতের সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত শিক্ষার্থীরা। আমাদের নয়টি ব্যাচ এই সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই নির্মাণ কাজ শেষ হলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমবে। পাশাপাশি এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম গতি পাবে।’


যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ আন্দোলন কমিটির নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, ‘যশোরবাসীর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। কলেজটির ৫শ’ শয্যার হাসপাতালের জন্যেও দীর্ঘদিন আন্দোলন করতে হয়েছে। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। করোনা মহামারীর সময় যশোরবাসী স্বাস্থ্য সেবার বেহাল দশার বিষয়টি টের পেয়েছে। এই হাসপাতালটি নির্মাণ হলে কেবল শিক্ষার্থীরা না এ অঞ্চলের মানুষও উপকৃত হবে। তাদের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’


তিনি বলেন, ‘এ হাসপাতালটি নির্মাণের উদ্যোগ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমরা চাই পুনরায় যেন এ কার্যক্রম ঝুলে না যায়। এজন্য সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে জনস্বার্থ বিবেচনায় দ্রুত গতিতে কাজ সম্পন্ন করার অনুরোধ জানাব।’

আরও পড়ুন: বাবার স্বীকৃতিবঞ্চিত আফিয়াকে আইনি সহায়তা দেবে পুলিশ

যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবু হাসনাত মো. আহসান হাবীব বলেন, ‘এধাপে ৫শ’ শয্যার হাসপাতালসহ সব অবকাঠামো নির্মাণ হবে। গণপূর্ত বিভাগ বেশ জোরেশোরে কাজ করছে। আমরা প্রতিনিয়ত তাদের কাজের অগ্রগতি মনিটরিং করছি। তাদের অগ্রগতি সন্তোষজনক। তারা কাজ শেষ করার জন্য দুই বছরের সময় নিয়েছে। আশাকরি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এ কাজ শেষ হলে আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ যশোরের আপামর জনগণ উপকৃত হবে।’


এ বিষয়ে যশোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই মাস থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ইতমধ্যে মাটি কাটা ও পাইল ড্রাইভের কাজ শেষ হয়েছে। এখন সার্ভিস পাইলের কাজ চলছে। অন্যান্য কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।’ 


২০২৮ সালের জুনের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।


গণপূর্তের দেয়া তথ্য মতে, চলমান প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭৬ কোটি টাকা। এ ব্যয়ে দশতলা বিশিষ্ট ৫শ’ শয্যার হাসপাতাল ভবন, শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি হোস্টেল, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য দুটি হোস্টেল, একটি নার্সিং কলেজ ভবন, একটি নার্সিং হোস্টেল, একটি স্টাফ নার্স ডরমেটরি ভবন, ২১ ফ্ল্যাটের একটি চিকিৎসক কোয়াটার, ২৪ ফ্ল্যাটের একটি কর্মচারী কোয়াটার, ৫শ’ আসনের একটি অডিটোরিয়াম, একটি মসজিদ ও একটি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন