বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে এনালগ এক্সরে মেশিন আছে, কিন্তু অকেজো। আল্ট্রাসোনোগ্রাম মেশিনসহ অধিকাংশ পরীক্ষার যন্ত্রাংশ ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে নষ্ট। বাড়তি টাকায় বাইর থেকে রোগীদের পরীক্ষা করতে হয়। চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। বাধ্য হয়ে প্রাইভেট ল্যাবে পরীক্ষা করতে হচ্ছে।
চিকিৎসা নিতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী ইতি বলেন, ‘ডাক্তার আল্ট্রাসোনোগ্রাম পরীক্ষা দিছেন। কিন্তু আল্ট্রাসোনোগ্রাম টেস্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করানো হচ্ছে না। তাই প্রাইভেট ল্যাবে কয়েকগুণ বেশি টাকায় পরীক্ষা করিয়েছি।’
গৃহিনী রহিমা বেগম বলেন, ‘জ্বরের জন্য ডাক্তার ২টা পরীক্ষা দিয়েছে। তার একটাও নাকি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করানো যাবে না। কি আর করার। কষ্ট হলেও প্রাইভেটে ক্লিনিকেই পরীক্ষা করাতে হবে।’
এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমী আক্তার পরীক্ষার যন্ত্রাংশের অকেজোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কয়েকটা জিনিসের অভাব খুব বেশি উপলব্ধি করছি। তার মধ্যে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন, আল্ট্রাসোনোগ্রাম মেশিন এবং রক্ত পরীক্ষা জন্য কাউন্টার মেশিন।’
আরও পড়ুন: উপজেলা হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম সরবরাহের নির্দেশ
এদিকে পিরোজপুর সদরের জেলা হাসপাতালটিতে মাসের পর মাস ধরে পড়ে আছে নষ্ট এক্সরে মেশিন। এখানে হয় না ইসিজিও। অভিযোগ আছে, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি নানা অজুহাতে অকেজো রেখে রোগী পাঠানো হয় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
রোগীর স্বজন তোফাজ্জেল মীর অভিযোগ করে বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিগুলো নানা অজুহাতে অকেজো করে রেখে প্রাইভেট ক্লিনিকে টেস্ট করাতে পাঠান এবং সেখানে থেকে মোটা অংকের কমিশন হাতিয়ে নেন।’
তবে পিরোজপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘অধিকাংশ পরীক্ষা করতে পারছি। ২-১টি পরীক্ষা করতে হয়তো সমস্যা থাকতে পারে। সেটাও পরবর্তীতে ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টা করবো।’
অপরদিকে, পটুয়াখালী ২৫০ শয্যার হাসপাতালে বছর পর বছর বিকল হয়ে পড়ে আছে নানা যন্ত্রপাতি। ৫টি এক্সরে মেশিনের ৩টি নষ্ট। ২টি আল্ট্রাসোনোগ্রাফ মেশিনের অচল ১টি। চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের টেস্ট করাতে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিকে যেতে হচ্ছে। যার কারণে রোগীদের গুণতে হয় বাড়তি টাকা।
রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে জেলা শহরে একটু উন্নত চিকিৎসা নিতে আসা ইউনুস মোল্লা জানান, ডাক্তার তাকে ৪টি টেস্ট দেয়। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি বিকল থাকায় যার সবকটি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক থেকে করতে হবে। কিন্তু তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় হতাশা হয়েই ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে।’
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, ‘আল্ট্রাসোনোগ্রামের দুটি মেশিনের মধ্যে একটি অকেজো আছে। নষ্ট মেশিনটিও মেরামতের জন্য চিঠি দিয়েছি।’
আরও পড়ুন: রংপুর বিভাগ /৪৪০ স্বাস্থ্যকেন্দ্র শুধুই কাগুজে অঙ্গীকার, নেই কোনো সেবা
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য সেবায় অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং তা সংস্কারে ৩ দফা দাবিতে টানা ২১ দিন ধরে ছাত্র-জনতার ব্যানারে আন্দোলন চালাচ্ছে বরিশালের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ৪১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানকার ৩৬টি এক্সরে মেশিনের মধ্যে ২৭টি সচল। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি মেশিনের ৪১টির ১৫টিই অচল। এর বাইরেও আরও অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষাই হয় না ভারি মেশিনারিজ অকেজো থাকায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন হাসপাতালেই ভারি মেশিনারিজের অভাব আছে। কেনাকাটার প্রক্রিয়া চলছে, তবে সেটা সময় সাপেক্ষ।’