‘মৃত্যুঝুঁকি’ নিয়ে চলাচল লক্ষ্মীপুর-রায়পুর-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কে!

৩ সপ্তাহ আগে
দীর্ঘ দিন ধরে সংষ্কার না হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-রায়পুর-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কের এখন বেহালদশা। সড়কের বেশিরভাগ স্থানেই কাপেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এতে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। প্রতিদিন এসড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজারো যানবাহন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চলাচলকারী। সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় সড়কটি সংস্কার করা যায়নি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় গর্ত আর খানা-খন্দে ভরা পুরো সড়ক। যানবাহন চলছে হেলেদুলে। দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-রায়পুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের রায়পুর উপজেলার বর্ডার বাজার থেকে লক্ষ্মীপুর সদরের চন্দ্রগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার সড়কের এমন বেহালদশা। সড়কের বেশিরভাগ স্থানের ইট খোয়া উঠে সোল্ডার ভেঙে গেছে। এতে ক্রমেই যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় আঞ্চলিক এ মহাসড়কটি পরিণত হয়েছে মরণ ফাঁদে।


অথচ প্রতিদিন এসড়ক দিয়ে লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন হাজারো মানুষ। বেহাল এই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যান বাহন। এতে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা।


এদিকে চালকরা জানালেন, এসড়কে গাড়ি চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। সড়কজুড়ে বড়-বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে যানবাহন। লক্ষ্মীপুর জেলা শহর থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত যেতে যেখানে সময় লাগতো ৪০ মিনিট, সেখানে এখন লাগছে প্রায় ২ ঘণ্টা। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি যাত্রীদেরও পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।

আরও পড়ুন: 'লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় মাসিক ৬৫ লাখ উদ্বৃত্ত, তবুও ঋণ ২৬ কোটি টাকা!'

স্থানীয়রা বলছেন, সড়ক তো নয়, যেন মৃত্যুফাঁদ। প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। গত সপ্তাহে সড়কের বেহালদশায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চন্দ্রগঞ্জ বাজার এলাকায় যাত্রীবাহী বাস খালে পড়ে নিহত হন ৫ জন। আহত হন কমপক্ষে ১৫ জন। গত ৬ই আগস্ট লক্ষ্মীপুরের সীমান্তবর্তী চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজার এলাকায় মাইক্রোবাস খালে পড়ে নিহত হন একই পরিবারে ৭ জন। সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। এরপরেও এখনও টনক নড়েনি সড়ক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আর কত মানুষ নিহত হলে তাদের ঘুম ভাঙে?


পৌর শহরের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইউছুফ হোসেন টিপু বলেন, ‘রাস্তা যে অবস্থা, এক একটা গর্ত যেন, মরণ ফাঁদ। এই মরণ ফাঁদে পড়ে যানবাহন গর্ত থেকে উঠেতে হেলেদুলে ওঠে। এতে সড়কে পাশ দিয়ে হাঁটাও এখন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। এই বুঝি গাড়ি ঝুল দিয়ে গায়ের ওপর পড়লো।’


 তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগের জন্য একমাত্র আঞ্চলিক সড়ক এটি। অথচ সড়কের এমন বেহাদশা, দেখার যেন কেউ নেই।’


কামাল হোসেন নামের এক বাসযাত্রী বলেন, ‘সড়কের এমন বেহাল অবস্থা তা দেখেও আমাদের জীবন বাজি রেখে প্রয়োজনের তাগিদে এই সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে।’ বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি জেনেও এ সড়ক ব্যবহার করছেন তারা।


জামাল নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘সড়কের বেহালদশার কারণে চোখের সামনে বিভিন্ন দুর্ঘটনা দেখতে হচ্ছে আমাদের। সড়ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় প্রায় অকাল মৃত্যু ঘটছে মানুষের। সড়কের এক একটা গর্ত ভয়াবহ। মনে হয় যেন গাড়ি চলছে ডোবা-নালার ওপর দিয়ে। রাস্তা আর রাস্তার মধ্যে নেই।’


 এমন বাস্তবতায় দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

আরও পড়ুন: এটা কি রাস্তা, না দিঘি?

লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের বাসিন্দা শাহরিয়ার বলেন, ‘আঞ্চলিক এই সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়েছে। বড় বড় গর্ত আর খানা-খন্দের কারণে বড় বড় যানবাহনই চলছে হেলেদুলে। ছোট যানবাহনে চলাচল এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, হাসপাতালে নেয়া আগেই রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। এতে বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকিও।’


সিএনজি অটোরিকশা চালক মুরাদ বলেন, ‘পেটের দায়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে হয়, কিন্তু সড়কের বেহালদশার কারণে কিছুক্ষণ গাড়ি চালানার পর আর দৌঁড়াতে হয় গাড়ির গ্যারেজে। এতে ইনকাম করে যে সংসার চালাব, সেই সুযোগইতো পাই না। এতে পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের।’


ঢাকাগামী ইকনো পরিবহনের চালক সাইফুল বলেন, ‘৪০ মিনিটের রাস্তা পার হতে এখন সময় লাগছে প্রায় দুই ঘণ্টা। ঢাকা থেকে গাড়ি চালিয়ে লক্ষ্মীপুরের সীমানা পর্যন্ত আসতে আমাদের তেমন কোনো কষ্টই হয় না। অথচ লক্ষ্মীপুরের সীমানা প্রবেশের পর ৩৯ কিলোমিটার রাস্তা গাড়ি চালাতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় আমাদের। গাড়ির তো ক্ষতি হয়ই, তার ওপর শরীর ব্যথা হয়ে যাওয়ায় পরদিন আর গাড়ি চালাতে ইচ্ছে করে না ‘


এদিকে সড়কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চার লেন প্রকল্পে সড়কটি অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সড়ক সংস্কারে বড় ধরনের কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এতে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে চার লেন প্রকল্পে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, কার্যাদেশ পেলে সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
 

বন্দরনগরী চট্রগ্রাম থেকে ভোলা-বরিশালসহ দেশের দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার হাজারো মানুষ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন