ব্যাংকে টাকা রেখে ভুলে গিয়েছিলেন, এরপর যা হলো

১ দিন আগে
পরিবারের সাথে চট্টগ্রামে বসবাস করেন চিকিৎসক দেবলা মল্লিক। তিনি ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। সে সময় সোনালী ব্যাংক যশোর কর্পোরেট শাখায় নিজ নামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলে টাকা জমাতে শুরু করেন। এরপর বদলি হয়ে চলে যান অন্য জায়গায়।

ভুলে যান ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কথা। হঠাৎ সোনালী ব্যাংক যশোর কর্পোরেট শাখা থেকে ফোন করে জানানো হয় তার হিসাবে সুদ-আসলে জমা আছে তিন লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে এসে তিনি সেই টাকা বুঝে পেয়েছেন।


শুধু দেবলা মল্লিকই নয় এমন ১৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মালিককে তাদের দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা টাকা ফেরত পেয়েছেন। এরমধ্যে একটি অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ টাকা ছিল ৭ লাখ ৭৭ হাজার। সর্বনিম্ন একটিতে টাকা ছিল ৬০ হাজার ১৪১ টাকা। ব্যাংক কর্মকর্তাদের এমন উদ্যোগ সাধারণ গ্রাহকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।


ডা. দেবলা মল্লিক জানান, আমার গচ্ছিত এ টাকার কথা মনে ছিলো না। যশোর সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামানের আমাকে খুঁজে বের করতে অনেক কষ্ট করেছেন। সবাই এই কাজটি করে না। তার এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

আরও পড়ুন: বেনাপোল সীমান্তে স্বর্ণের বারসহ পাচারকারী আটক


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দশ বছরের অধিক সময় ধরে লেনদেন না হওয়া হিসাবকে অদাবিকৃত হিসেবে চিহ্নিত করে হিসাবের স্থিতি বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণের বিধান রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংক যশোরের জিএম ইকবাল কবিরের অনুপ্রেরণায় যশোর কর্পোরেট শাখার ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান গ্রাহকদের টাকা ফেরতের উদ্যোগ নেন। গ্রাহকের হিসাব খোলার ফর্মে পাওয়া খুব সীমিত তথ্যের উপর ভর করে তাদের বর্তমান অবস্থান সনাক্ত করেন এরপর ১৮ জন গ্রাহককে ফেরত দেয়া হয় তাদের ভুলে যাওয়া জমানো টাকা।
ভুলে যাওয়া টাকা ফেরত পেয়েছেন ২০০৬ সালের দিকে যশোর কোতোয়ালি থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আব্দুল কাদের বেগ। ওই সে সময় যশোর সোনালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় নিজ নামে  অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। বদলি সূত্রে অন্য জেলায় চলে যাওয়ায় ভুলে যান একাউন্টের কথা। তারপর থেকে লেনদেন না করায় অচল তালিকায় চলে যায় তার অ্যাকাউন্ট। ওই অ্যাকাউন্টে সুদে আসলে টাকা জমা হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
 

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বেগ বলেন, সে সময় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে আমাদের বেতন হতো। পরে পুলিশ কমিউনিটি ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন হওয়ায় সোনালী ব্যাংকের আর লেনদেন হয়নি। একসময় আমার স্ত্রী মারা যায়, আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে সেই অ্যাকাউন্টের চেকবইসহ সকল কাগজপত্র হারিয়ে ফেলি। সম্প্রতি ফোন করে টাকা ফেরত দিয়েছেন যশোর সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ইনচার্জ) মো. মনিরুজ্জামান। দীর্ঘদিন পরে এমন টাকা পেয়ে ব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেন তিনি।
 

ব্যাংকের আরেক গ্রাহক জিএম নাসিরুজ্জামান। তার ছেলে নাইম হাসান শুভ বলেন, ‘১৯৯২ সালে আব্বু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা হিসেবে যশোরে কর্মরত ছিলেন। সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা আছে সেটি তার মনে ছিল না। আমরা ভেবেছি, দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় অ্যাকাউন্টটি ক্লোজ হয়ে গেছে। তবে ব্যাংক থেকে কল পেয়ে ব্যাংকে গিয়ে আমরা ৮৩ হাজার ৫৪৯ টাকা পেয়েছি।’

আরও পড়ুন: ৫ ব্যাংককে একীভূতকরণের প্রস্তাব অনুমোদন উপদেষ্টা পরিষদে


এদিকে ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯৫ টাকা পাওয়া গ্রাহক রবিউল আলম বলেন, ‘আমি সোনালী ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। ব্যাংক কর্মকর্তারা ডেকে এনে টাকা ফেরত দিয়েছেন। আমি ওই টাকা রেখেই পুনরায় একাউন্ট চালু করেছি।’
 

সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা ব্যাংকে যে টাকা রাখি সেটি তাদের কাছে আমানত। দীর্ঘদিন পর তা ফেরত দিয়ে এক কথায় আমানত রক্ষা করেছে যশোর সোনালী ব্যাংক। এ কাজটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।’
 

যশোর সোনালী ব্যাংক পিএলসি কর্পোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ইনচার্জ) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘১০ বছরের অধিক সময় ধরে ইন-অ্যাকটিভ গ্রাহকদের ক্লোজ করে অ্যাকাউন্টে থাকা ব্যালান্স বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে প্রদান করতে হবে। এটি আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। আমরা যশোর সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখায় এ রকম মোট ২৫শ' অ্যাকাউন্ট ট্রেস করি। এর মধ্যে ২৪শ’ অ্যাকাউন্টে সামান্য পরিমাণে ব্যালান্স ছিল। বাকি ১০০টি অ্যাকাউন্টের মধ্যে ১৮টিতে মোটা অংকের টাকা দেখতে পাই।’

আরও পড়ুন: স্ত্রী-ছেলেসহ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ৫৬ ব্যাংক হিসাবে ১৫ কোটি টাকা

তিনি বলেন, সোনালী ব্যাংক পিএলসি জেনারেল ম্যানেজারস অফিসের জেনারেল ম্যানেজার ইকবাল কবীর স্যারের নির্দেশনায় আমরা এই ১৮টি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে খুঁজে বের করে টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি।
 

তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন আগের অ্যাকাউন্ট হওয়ায় এবং সে সময় এনআইডি কার্ড না থাকায় তাদের খুঁজে বের করা সহজ ব্যাপার ছিল না। অনেকটা দায়বদ্ধতা থেকেই যশোর ত্যাগ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাওয়া এ সব গ্রাহকদের খুঁজে বের করে টাকা ফেরত দিয়েছি।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন