ব্যাংকখাতে নতুন উদ্দীপনা, আবারও রক্ষাকারীর ভূমিকায় আমানতকারীরা

৪ ঘন্টা আগে
আর্থিক খাতের দুরবস্থায় আবারও রক্ষাকারীর ভূমিকায় আমানতকারীরা। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে বাজারভিত্তিক করা, ডলার কিনে সমপরিমাণ টাকা ব্যাংকগুলোতে সরবরাহ, রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সে নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ ধরে রাখাসহ নানা উদ্যোগে টানা ১৭ মাস পর দুই অঙ্কের ঘরে ফিরেছে ব্যাংকখাতে আমানতের হার। তবে ঢালাও নয়, আমানতকারীরা আস্থা রাখছেন সুশাসন চর্চাকারী ব্যাংকগুলোর ওপর।

নদীর এক কূল ভাঙলে আরেক কূল গড়ে-প্রচলিত কথাটির সঙ্গে আর্থিক খাতের মিল স্পষ্ট। কারণ, একদিকে প্রায় দুই ডজন ব্যাংক যেখানে খাদের কিনারে, অন্যদিকে হাফ ডজন ব্যাংকের তারল্য উপচে এখন পোয়াবারো।

 

তথ্য বলছে, গত জুন জুলাই মাসেও ট্রেজারি বন্ড ও বিলের সুদের হার ছিল ১১ থেকে ১২ শতাংশ। অক্টোবর নাগাদ তা কমে আসে ১০ এর ঘরে। বছরের শুরুতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে ব্যাংকের সাথে সামঞ্জস্য রাখার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের মধ্যে পার্থক্য কমে যাওয়ায় আমানতকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে ১৭ মাস পর গত আগস্টে দুই অঙ্কে ফিরে ১০.০২ শতাংশে পৌঁছেছে আমানতের হার।

 

আরও পড়ুন: এবার একীভূত হবে দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও!

 

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকখাত মূলত ব্যাংক মালিকদের হাতে নিরাপদ থাকার কথা থাকলেও তারা লুটপাট করেছে, যার প্রভাব দৃশ্যমান। তবে বর্তমান দুরবস্থায়ও ব্যাংক খাতকে টিকিয়ে রাখছে মূলত আমানতকারীরাই, যারা দাতা ও ত্রাতার ভূমিকায় আছে।

 

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেন, ‘সুদহার কমলে এটি স্টক মার্কেটের জন্য ভালো খবর। মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলে সুদহার কমানো হয়। ফলে মূল্যস্ফীতি ও সুদহার কমলে স্টক মার্কেটে অর্থ প্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।’

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শহীদুল জাহীদ বলেন, ‘কিছু ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা আমানত তুলে নিচ্ছেন এবং নিরাপদ মনে হওয়া ব্যাংকে সেই আমানত পুনঃস্থাপন করছেন। যেসব ব্যাংককে মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে, সেখানে টাকা রাখার বিষয়ে আস্থা নেই। তাই তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ও সচ্ছল ব্যাংকগুলোতে এখন আমানতকারীরা তাদের অর্থ গচ্ছিত রাখছেন।’

 

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি করা অডিটেও ব্যাংকগুলোর বর্তমান চিত্র উন্মুক্ত হয়ে এসেছে। ফলে স্বাভাবিক সময় থেকে এসব ব্যাংকের তারল্য এখন উদ্বৃত্ত। রেমিট্যান্স পাঠানোতেও ভরসা হয়ে উঠছে এসব ব্যাংক। ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার ক্রয় এবং সমপরিমাণ টাকা বাজারে সরবরাহের পদক্ষেপ গ্রাহক আস্থা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। যার প্রভাব এরমধ্যেই শেয়ার বাজারের সূচকেও পড়েছে।

 

আরও পড়ুন: স্কুল ব্যাংকিংয়ে শিক্ষার্থীদের আমানত কমছে কেন?

 

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেন, ‘যে ব্যাংকগুলোর পারসেপশন ব্যাড, ব্যাড ম্যানেজমেন্ট, এনপিএল বা ব্যাড লোন রেশিও বেশি, সেগুলোতে মানুষ আর টাকা রাখছে না। তাই সব আমানত এখন ৮-১০টি সবল ব্যাংকে চলে গেছে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে স্পষ্ট পার্থক্য দেখা দিয়েছে। যারা ভালো ম্যানেজমেন্ট করছে, তাদের শেয়ার বাজারে সূচকেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংক মালিকদের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াব। এই কথাটিই জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া ব্যাংক মার্জারের মূল উদ্দেশ্য। এই উদ্যোগের প্রভাবে ব্যাংক খাতে আমানত ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে, যা স্পষ্ট করে যে মানুষ এখনও ব্যাংকিং খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি।’

 

সবশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.৪৩ শতাংশ। যা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে নেমে আসে ৮.৫ শতাংশে। আমানতকারীদের এমন মনস্তত্ত্ব ভবিষ্যতের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন