বৃদ্ধ পিতা-মাতা: সন্তানের চোখে আজ শুধুই বোঝা?

৬ দিন আগে
মাতা-পিতাএ এক আশ্রয়দায়ী ছায়া, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অমূল্য প্রতীক। যাঁদের কাঁধে ভর দিয়েই সন্তানের প্রথম পদচারণা, যাঁদের বুকেই সন্তানের প্রথম কান্না প্রশমিত হয়েছে, এবং যাঁদের ত্যাগ-তিতিক্ষার ফলেই সন্তানের জীবন দাঁড়িয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ ভবিষ্যতের ওপর। তাঁরা নিজেরা অভুক্ত থেকেও সন্তানকে আহার করিয়েছেন, নিদ্রাহীন রাত পার করে কোল দুলিয়ে ঘুম পাড়িয়েছেন, জীবনের সমস্ত স্বপ্ন ও স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে সন্তানের জন্য নির্মাণ করেছেন সাফল্যের সিঁড়ি। আর আজ? সেই চেনা মুখগুলো বার্ধক্যের করুণ অধ্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে উপেক্ষা ও অবহেলার চৌকাঠে। যাঁদের চোখে একদিন সন্তানের জন্য অনন্ত ভালোবাসার ঝরনা বয়ে গেছে, আজ সেই চোখেই কেবল এক নিঃসঙ্গ হাহাকার—কারণ, সন্তানের কাছে তারা যেন এক বিরক্তিকর দায়, কেবলই এক অবাঞ্ছিত বোঝা!

বর্তমান বাস্তবতা

আজ সমাজের বহু পরিবারে দেখা যায়,বৃদ্ধ পিতা-মাতা সন্তানের সংসারে নিঃস্ব, অনাদৃত ও একঘরে। ব্যস্ততা, ক্যারিয়ার, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত জীবনযাপন আর ভোগ-বিলাসের যাত্রায় যাঁরা সন্তানদের পেছনে জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের সেবায় এখন কেউ সময় দেয় না। একসময় যাঁদের হাত ধরেই হাঁটতে শিখেছিল সন্তান, আজ সেই হাতটিই তাদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

ইসলামের দৃষ্টিতে পিতা-মাতার মর্যাদা

 

ইসলাম পিতা-মাতাকে সম্মানের এমন উচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত করেছে, যা কোনো ধর্ম-সভ্যতায় এতটা বিস্তৃত নয়।


আল্লাহ তায়ালা বলেন,


وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا  আর তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন—তোমরা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। (সুরা বনি ইসরাইল:২৩০) পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের কথা আল্লাহ নিজের ইবাদতের পরেই বলছেন,এ থেকে তাদের মর্যাদা অনুমান করা যায়।


إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا তোমার নিকট তাদের একজন বা উভয়েই বার্ধক্যে উপনীত হলে, তুমি তাদেরকে উফ বলো না, ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো। (সুরা বনি ইসরাইল:২৩) বৃদ্ধ বয়সে পিতা-মাতা অধিক দুর্বল ও সহানুভূতির দাবি রাখে। অথচ এ সময়েই আমরা তাদের প্রতি সবচেয়ে বেশি উদাসীন হয়ে পড়ি।

 

রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

 

رَغِمَ أَنْفُهُ مَن أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عِندَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا ثُمَّ لَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ ধুলায় গড়াগড়ি যাক সে, যে তার বৃদ্ধ পিতা-মাতার একজন বা উভয়কে পেয়েও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।(সহিহ মুসলিম:২৫৫১) একে নিছক অবহেলা নয়, বরং একে রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধ্বংসের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।


 

সভ্যতা কী শেখাচ্ছে?

আজকের আধুনিক শিক্ষিত সমাজ আমাদের শিখাচ্ছে, নিজের জীবন নিয়ে ভাবো বৃদ্ধাশ্রম একটি বিকল্প ব্যবস্থা! অথচ পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো জাতি উন্নত হয়নি পিতা-মাতার অবজ্ঞা করে। যে সন্তান পিতা-মাতার খেদমত করে, তার জীবনে বরকত হয়, আর যে তাদের অবহেলা করে, তার থেকে আল্লাহ তাআলা বরকত তুলে নেন।

 

আমাদের করণীয়

 

১.বৃদ্ধ পিতা-মাতার পাশে সময় দেওয়া ২.তাদের চাহিদা বোঝা ও মানসিক শান্তি দেওয়া ৩.নিজে খেদমতে অংশগ্রহণ করা, চাকর বা স্ত্রীকে দিয়ে নয় ৪.পরিবারের শিশুদের সামনে পিতা-মাতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা
৫.তাদের দোয়া পাওয়ার জন্য চেষ্টা করা

 

যারা আমাদের হাত ধরে হাঁটতে শিখিয়েছেন, আজ আমরা তাদের হাত ধরছি না,এটাই কি আমাদের মানবিকতা? এটাই কি আধুনিকতা? আজকের সন্তান যদি পিতা-মাতার অধিকার ভুলে যায়, তবে আগামী প্রজন্মও তার জন্য অপেক্ষা করছে একই আচরণ নিয়ে! আল্লাহর কাছে দুআ করি, তিনি যেন আমাদের পিতা-মাতার তাওফিক দান করেন। আমিন!

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন