বিহারে বিহারে প্রার্থনায় শুরু প্রবারণা, ফানুস-প্রদীপে পাহাড়ে উচ্ছ্বাস

৪ দিন আগে
ধর্মীয় দেশনা ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল থেকে বিহারে বিহারে ছোয়াইং দান সমবেত প্রার্থনা ও ধর্মীয় দেশনায় অংশ নেন বৌদ্ধ ধর্মালম্বী তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী মানুষ। প্রবারণাকে ঘিরে পাহাড়ি পল্লী গুলোতে চলছে নানা আয়োজন। ফানুস উড়ানো পিঠা তৈরি রথ টানাসহ নানা আয়োজনে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ৩ দিন ব্যাপী পালিত হবে এ উৎসব। তাই উৎসবকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব।

মূলত, আর্শিণী পূর্ণিমা থেকে আষাঢ়ী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিনমাস বর্ষাবাস পালনের পর পালন করা হয় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা বা ওয়াগ্যোয় পোয়ে। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মতে প্রবারণা পূর্ণিমার দিনই রাজকুমার সিদ্বার্থের মাতৃগর্ভে প্রতিসন্দি গ্রহণ, গৃহত্যাগ ও ধর্মচক্র প্রবর্তন সংঘটিত হয়েছিল তাই প্রতিটি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয়। তাই নানা আয়োজনে উৎসবটি পালন করে থাকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

 

পাড়ায় পাড়ায় পিঠা তৈরী ফানুষ উড়ানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রথ টানা হাজার প্রদীপ প্রজ্জলনসহ নানা আয়োজনে ৩ দিন ব্যাপী পালিত হবে প্রবারণা উৎসব। বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী মারমা বয়-বৃদ্ধ, তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোররা এইদিন সকালে বিহারে বিহারে গিয়ে ধর্মীয় গুরুদের চোয়াইং দান (ভান্তেদের ভাল খাবার পরিবেশন) করেন এবং সকালেই সমবেত প্রার্থনা ও সন্ধ্যায় মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জলনে অংশ নিবেন। এদিকে উৎসবকে ঘিরে পাড়ায় পাড়ায় চলছে রথ তৈরি ও ফানুষ বানানোর কাজ। মারমা যুবক যুবতীরা দল বেধে তৈরি করছে রঙ বেরঙের ফানুস। শুধু তাই নয় প্রতিটি বিহারে চলছে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জার কাজ। শেষ মুহূর্তে নতুন পোশাক কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে তরুণ-তরুণীরা।

 

আরও পড়ুন: পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, মিয়ানমার-ভারত থেকে ৪ রুটে ঢুকছে চালান

 

মারমা তরুণ-তরুণীরা বলেন, এই দিনের জন্য আমরা একটি বছর অপেক্ষা করে থাকি। এ বছর আমরা অনেক আনন্দ করবো। আমাদের কেনাকাটা শেষ, এখন ক্যাং পরিস্কার করতেছি, রাতে দল বেঁধে ফানুস তৈরি করবো। তারা আরো বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমার মূল আকর্ষণ হচ্ছে রঙবেরঙের ফানুস বাতি উড়ানো। এছাড়াও রয়েছে রথ টানা। সব মিলিয়ে এবারের প্রবারনা পূর্ণিমায় বন্ধু-বান্ধব মিলে অনেক আনন্দ করবো, মজা করবো।

 

এদিকে প্রবারণা উৎসব পালনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি চনুমং মারমা। তিনি বলেন, এরইমধ্যে রথ বানানো হয়ে গেছে। শুধু রঙ দেয়া বাকি, এছাড়াও ফানুসও তৈরি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। যেহেতু বান্দরবানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে সেহেতু এ জাঁকজমকভাবে পালন করা হবে প্রবারণা পূর্ণিমা।

 

আরও পড়ুন: জুমের ধান কাটার ধুম, পাহাড়ে উচ্ছ্বাস

 

অন্যদিকে প্রবারণা উৎসব শান্তিপূর্ণ ভাবে পালনে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান বান্দরবানের পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাউছার। তিনি বলেন, এটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। তাই এ উৎসবটি যেন উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করতে পারে সেজন্য কয়েক স্তরে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। আশা করি এ ধর্মীয় উৎসবটি আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করতে পারবে।

 

উল্লেখ্য, ৫ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত বান্দরবানে পালিত হবে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রবারণা উৎসব।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন