এশিয়া কাপ বাছাইয়ে তৃতীয় রাউন্ডে ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে হংকংয়ের বিপক্ষে ৪-৩ ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ। লাল সবুজদের হয়ে গোল তিনটি করেছেন হামজা, শমিত সোম ও শেখ মোরসালি। হংকংয়ের হয়ে হ্যাটট্রিক করেন রাফায়েল মেরকিস, অন্য গোলটি করেন এভারটন কামারগো।
ম্যাচের মাত্র ১৩তম মিনিট। ডি-বক্সের বাঁ প্রান্তের বাইরে থেকে হামজার দুর্দান্ত কোণাকোণির ফ্রি-কিক। ঝাঁপিয়ে পড়েও ঠেকাতে ব্যর্থ হলেন হংকংয়ের গোলরক্ষক। উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো জাতীয় স্টেডিয়াম। বাংলাদেশের জার্সিতে নিজের চতুর্থতম ম্যাচে দ্বিতীয় গোল পেয়ে গেলেন লেস্টার সিটি তারকা। স্বাগতিক সমর্থকদের শুরুর আনন্দ অনেক্ষণই স্থায়ী হলো। বল দখলে আধিপত্য দেখিয়ে সে আনন্দ আরও বাড়িয়ে তুললেন হামজারা। তবে ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় আর গোল পাওয়া হচ্ছিল না। তাও পায়ের কাড়িকুড়িতে গ্যালারি মাতিয়ে রাখছিলেন কাবরেরার শিষ্যরা। প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময় শেষেও লিড ধরে রেখেছিল তারা। কিন্তু যোগ করা চার মিনিটের শেষ মুহূর্তে এক ভুলে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো স্টেডিয়াম।
কর্নার থেকে নেয়া হংকংয়ের ক্রস জটলার মধ্যে ক্লিয়ার করতে গিয়ে উল্টো হেডে ছয় গজ দূরত্বে পাঠিয়ে দেন বাংলাদেশি ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। অরক্ষিত অবস্থায় বল পেয়ে যান এভারটন কামারগো। সমতায় নিয়ে বিরতিতে যায় দুদল।
আরও পড়ুন: ফিফার দুই কমিটিতে তাবিথ ও কিরণ
সে ধাক্কা সামলে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর বদলে ফের ভুল। এবার সোহেল রানার ব্যাকপাস গোলমুখে পেয়ে সুযোগ কাজে লাগান রাফায়েল মেরকিস। ৫০তম মিনিটে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় হংকং।
শুরুর একাদশে না থাকা শমিত, জামাল ভূঁইয়া ও ফাহমেদুল ইসলামকে ৫৬তম মিনিটে মাঠে নামান কোচ কাবরেরা। তারা নামার পর আক্রমণে কিছুটা ধার বাড়ে বাংলাদেশের। তবে এবারও ফিনিশিংয়ে দুর্বলতা দেখা গেল। উল্টো ৭৪তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে দারুণ একটি গোল আদায় করে নেয় হংকং। ডি-বক্সে সাদ উদ্দিনের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে গোলমুখে পাস দেন এভারটন। বুলেট গতির শটে জালে জড়িয়ে ম্যাচে জোড়া গোল তুলে নেন মেরকিস। ৭৭তম মিনিটে লাল সবুজ জার্সিতে অভিষেক হয় আরেক প্রবাসী ফুটবলার জায়ান আহমেদের। তিনি মাঠে নামার পর বাঁ উইংয়ে দারুণ কিছু আক্রমণ শাণায় বাংলাদেশ। তবে জালের দেখা পাওয়া হচ্ছিল না। ৮৪তম মিনিটে গিয়ে হংকং গোলরক্ষকের অদক্ষতায় সুযোগ পায় লাল সবুজরা। জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি-কিক বক্সে প্রতিপক্ষের এক ফুটবলার হেড নেয়ার পর নিকটে পেয়ে গোলমুখে ছোট ক্রস নেন ফাহমেদুল। সেটি গ্লাভসবন্দি করতে ব্যর্থ হন হংকং গোলরক্ষক। পেয়ে যান মোরসালিন। দ্রুত পা বাড়িয়ে জড়ান জালে। ফের ম্যাচে ফেরার আশা জাগে স্বাগতিকদের।
লিড পাওয়ার পর থেকে মাঠে শুয়ে-বসে অনেক সময় নষ্ট করছিল হংকয়ের ফুটবলাররা। তাতে নির্ধারিত সময় শেষে যোগ করা সময় দেওয়া হয় ৯ মিনিট। একের পর এক চেষ্টা করেও সাফল্যের দেখা পাচ্ছিল না জামালরা। হার থেকে মাত্র এক মিনিট দূরে। এমন সময় মোরসালিন-শোমিতের নৈপুণ্যে। বাঁ কর্নার থেকে মোরসালিনের নেয়া ক্রস প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে গোলমুখে চলে যায়। সেখানে পেয়ে হেডে জালে জড়ান শোমিত। তাতে উল্লাসে ফেটে পড়ে জাতীয় স্টেডিয়াম। হারতে হারতে যেন একটি পয়েন্ট আদায় করে নিলো বাংলাদেশ। কিন্তু কে জানতো, মাত্র কয়েক সেকেন্ড বাকি থাকা ম্যাচটি বাঁচাতে পারবে না কাবরেরার শিষ্যরা! শেষ বাঁশির অপেক্ষা করছিল সবাই। বাংলাদেশের বক্সে বল। সামনে এক ডিফেন্ডার। তার দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে মেরকিসের নেয়া শট জড়ায় জালে। হ্যাটট্রিক তুলে নেয়ার পাশাপাশি দলকেও জয় এনে দিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ফুটবল দলগত খেলা, একজনের খেলা নয়: হামজা
তাতে ৩ ম্যাচ শেষে মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতেই থাকল বাংলাদেশ। সমান ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষে চড়ে বসল হংকং। ৩ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিঙ্গাপুর, আর ২ পয়েন্ট নিয়ে তিনে ভারত। এ ম্যাচ হারায় মূলপর্বে খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেল হামজাদের।
]]>