পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, মিয়ানমার-ভারত থেকে ৪ রুটে ঢুকছে চালান

৫ দিন আগে
দুর্গম পাহাড় ও ভৌগোলিক জটিলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত অস্ত্র ঢুকছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। এতে অশান্ত হয়ে উঠছে পাহাড়ি জনপদ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বলছে, মিয়ানমার ও ভারত থেকে অন্তত চারটি রুট ব্যবহার করে অস্ত্র প্রবেশ করছে রাঙামাটিতে। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা সাংকেতিক ভাষা ও বিশেষ বার্তা বিনিময়ের কৌশল। পুলিশ বলছে, নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও অস্ত্র চালান রোধে নিয়মিত কার্যক্রম চালাচ্ছে যৌথবাহিনী; বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।

গহীন জঙ্গল ও দুর্গম পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে অপরাধের অভয়ারণ্য। নানা পথ বেঁকে নানা গোষ্ঠীর হাতে পৌঁছে যাচ্ছে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। অশান্ত হয়ে উঠছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। অস্ত্রের চালান ঘিরে গড়ে ওঠেছে আন্তঃদেশীয় নেটওয়ার্ক।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অন্তত চারটি রুট হয়ে অস্ত্র ঢুকছে রাঙ্গামাটিতে। যার একটি, মিয়ানমার থেকে ভারতের মিজোরাম হয়ে সীমান্ত পার হয়ে থাচি, লুলংছড়ি, চাকপতিঘাট, বসন্তপাড়া হয়ে রাঙ্গামাটিতে প্রবেশ। অস্ত্র আসার আরেক পথ- বান্দরবান থেকে বাঙ্গালহালিয়া, রাইখালী বাজার, বড়ইছড়ি হয়ে কাউখালী রুট।

 

আরও পড়ুন: গহীন পাহাড়ে পাচারের উদ্দেশ্যে জিম্মি ৩৯ নারী-শিশু উদ্ধার, আটক ২

 

তৃতীয় রুট হচ্ছে- মিয়ানমার থেকে মিজোরাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ, এরপর বরকল, শুকনাচারী, তালুকদারপাড়া, সারোয়াতলী হয়ে বাঘাইছড়ি পৌঁছাচ্ছে অস্ত্র। এছাড়া মিয়ানমার থেকে মিজোরামের পুকজিং, মানপাড়া সীমান্ত পেরিয়ে অস্ত্র যাচ্ছে রাঙ্গামাটির সাজেক লংকর পয়েন্টে।

 

ভারতের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এসব রুটে বাংলাদেশে অস্ত্র আসার পথে চলতি বছর দেশটিতে ধরা পড়েছে কিছু চালান। জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে জব্দ হয়েছে ৫টি বড় চালান। এসব চালানে ছিল একে-৪৭, এম-১৬, গ্রেনেড, গ্রেনেড লঞ্চারসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ।

 

পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক সংগঠনের সাবেক দুই সদস্য জানান, অস্ত্র পাচারে বিশেষ সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করা হয়- প্রতিটি অস্ত্রের জন্য আলাদা সংকেত থাকে। রয়েছে সুনির্দিষ্ট টিমও; যারা অস্ত্র আনা-নেয়ার কাজ করে।

 

সাবেক সদস্যরা আরও বলেন, অস্ত্রের বড় অংশ আসে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে; এরপর এগুলো ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। মিয়ানমার থেকে ৩ লাখ টাকার অস্ত্র বাংলাদেশে এনে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। এখানে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট পুরো ব্যবসাটি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং অস্ত্র আনা-নেয়ার সবকিছু তারা সমন্বয় করে।

 

অস্ত্রের অবাধ চালানের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো যেমন একে অপরের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে, তেমনি নিশানা করা হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরও। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৪২ সদস্য।

 

আরও পড়ুন: পাহাড়ের অবস্থা শান্ত, দাবি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

 

রাঙামাটির পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, ‘পাহাড়ের সীমান্তগুলো শুধু স্থলপথেই নয়, লেক ও নদীপথেও বিস্তৃত; ফলে নিয়ন্ত্রণে জটিলতা তৈরি হয়। তবে কোথাও অস্ত্র বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের তথ্য পেলে যৌথভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে।’

 

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা নানা ছদ্মনামে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তথ্য পেলে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সম্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’

 

গত এক বছরে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাতে অন্তত অর্ধশত মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের আশা- এই সংঘাতের অবসান ঘটলে আবারও শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরবে পাহাড়ে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন