সামান্য বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা হলেই সেতুর নিচ দিয়েও চলাচল করা যায় না। বাধ্য হয়েই ৬০ মিটার সেতুর জন্য ঘুরে আসতে হয় ১০ কিলোমিটার পথ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের নরেন্দ্রপুর কাচরার খালের ওপর নির্মিত সেতু অসম্পন্ন রেখেই পালিয়েছে ঠিকাদার।
প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুটি প্রায় ১ বছর ধরে অকোজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কাজ শেষের মেয়াদের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরুর কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মরিচা ধরেছে সেতুর বিভিন্ন স্থানে থাকা উন্মুক্ত রডে। এমন অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শাহজাহানপুর, আলাতুলী ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের হাজারো মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, তিনটি ইউনিয়নের পথচারীদের দুর্ভোগ লাঘবে ২০২৩ সালে কাচরার খালের উপর ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর৷ সে বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৯০ লাখ ৯২ হাজার টাকা। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজের সিংহভাগ শেষ হলেও অবশিষ্ট কাজ না করেই এমন অবস্থাতে রেখেই পালিয়েছেন ঠিকাদার।
আরও পড়ুন: এক সেতুতে ৬ শতাধিক জোড়াতালি, দুর্ঘটনার দায় নেবে কে?
দীর্ঘদিনের দাবির পর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হলেও গত এক বছর ধরে এভাবেই পড়ে রয়েছে সেতুর বাকি কাজ। এতে সেতু থাকলেও তা কাজে আসছে না পথচারীদের৷ দফায় দফায় এলজিইডি ও স্থানীয় প্রশাসনের নিকট যোগাযোগ করেও বাকি কাজ শুরুর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি পথচারীদের।
স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির নাম এই কাচরার বিলের সড়ক। একটি মাত্র সেতুর জন্য প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে দফায় দফায় অনুরোধ করার পর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেতুর কাজও প্রায় সম্পন্ন হয়েছে বছরখানেক আগে। কিন্তু সেতুর সঙ্গে সংযোগ সড়ক না করেই পালিয়েছিলেন ঠিকাদার। এরপর এতোদিন হয়ে গেলেও বাকি কাজ শেষ করতে আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷
পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ৭ কোটি টাকার সেতু থাকলেও তা আমাদের কোন কাজে আসছে না। বাধ্য হয়েই ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হচ্ছে আমাদেরকে। এমনকি মাঠে থাকা বিভিন্ন ফসল ঘরের পেছনে থাকলেও একই দূরত্ব অতিক্রম করে আনতে হচ্ছে। এমনভাবে সেতু ফেলে রাখলে কি দরকার ছিল কাজ করার। সরকারি অর্থ অপচয় ও অপব্যয় হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পথচারী শামসুল আলম বলেন, বিষয়টির দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। কারণ তিনটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ এই পথ দিয়ে অতিক্রম করে প্রত্যেকদিন৷ কাজ শুরু না করার পেছনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের গাফেলতি রয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ হলে হাজারো ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে হাজা হাজার মানুষ।
এনিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি ঠিকাদার মো. সেলিম।
মুঠোফোনে সময় সংবাদকে তিনি জানান, সেতুর মূল অবকাঠামোর কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন শুধু দুই পাড়ে মাটি ভরাট ও সড়কের কাজ বাকি রয়েছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের টাকা না পেয়ে স্থানীয়দের বাধায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই কাজ শুরু করে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।
আরও পড়ুন: পৌরসভায় বাস করলেও ভরসা ডিঙি নৌকায়, ভোগান্তির শেষ নেই ‘নতুন মাদারীপুর’ গ্রামবাসীর
জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে রয়েছে বলে জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। খুব কম সময়ের মধ্যে জমির মালিকদের কাছে অধিগ্রহণের চেক হস্তান্তর করা হবে। পাশাপাশি শিগগিরিই কাজ শুরু করে সেতু ও সড়ক চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, প্রকল্পের কাজ শেষের মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ০৬ মার্চ, নতুন করে সময় বৃদ্ধির পর প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত।

১ সপ্তাহে আগে
৫






Bengali (BD) ·
English (US) ·