পবিত্র কোরআন বিশ্ববাসীর হেদায়াতের উৎস

৪ দিন আগে
পবিত্র কোরআন বিশ্ববাসীর হেদায়াতের উৎস। এটি বিশ্ব মানবতার জন্য মহান আল্লাহর নির্দেশনা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পথ নির্দেশ করে। কোরআনের আয়াতগুলো আমাদের নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা, সামাজিক সম্পর্কের উপর গভীর দিকনির্দেশনা দেয়। এটি বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহের একটি উৎস। যা তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং অন্তরে শান্তি প্রদান করে।

কাফেররা মক্কায় নবীজির দাওয়াতের সূচনা হলে, নানাবিদ প্রশ্নে নবীজিকে জর্জরিত করে ফেলতো। একদিন ইসলামের চিরশত্রু উতবা নবীজিকে বললেন, কোরআন কী জিনিস আমাকে বলেন?

 

নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘বেশ ভালো, এখন আমার কথা শোনো।’ সে বলল, ‘ঠিক আছে শুনব।’ নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

 

‏حٰم تَنزِيْلٌ مِّنَ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ كِتَابٌ فُصِّلَتْ آيَاتُهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِّقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ بَشِيْرًا وَنَذِيْرًا فَأَعْرَضَ أَكْثَرُهُمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُوْنَ وَقَالُوْا قُلُوْبُنَا فِيْ أَكِنَّةٍ مِّمَّا تَدْعُوْنَا إِلَيْهِ‏‏ হা মিম, এ বাণী করুণাময় দয়ালু (আল্লাহ) এর তরফ থেকে নাজিলকৃত, এটা এমন একটি কিতাব, যার আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, অর্থাৎ কুরআন যা আরবি ভাষায় (অবতারিত), জ্ঞানী লোকদের জন্য (উপকারী)। (এটা) সুসংবাদদাতা ও ভীতিপ্রদর্শক কিন্তু অধিকাংশ লোকই মুখ ফিরিয়ে নিল। সুতরাং তারা শুনেই না। এবং তারা বলে, যে কথার প্রতি আপনি আমাদের ডাকেন সে ব্যাপারে আমাদের অন্তর পর্দাবৃত।’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত : ১-৫)

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করতে থাকেন এবং উতবা নিজ দু-হাত পশ্চাতে মাটির উপর রাখা অবস্থায় তাতে ভর দিয়ে শ্রবণ করতে থাকে। যখন নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেজদার আয়াতের নিকট পৌঁছে গেলেন। তখন সেজদা করলেন এবং বললেন, ‘আবুল ওয়ালিদ! তোমাকে যা শ্রবণ করানোর প্রয়োজন ছিল তা শ্রবণ করেছ, এখন তুমি জানো এবং তোমার কর্ম জানে।’

 

আরও পড়ুন: কোরআন অবমাননাকারী অপূর্ব পালকে নিয়ে যা বললেন আহমাদুল্লাহ ও আজহারী


উতবা সেখান থেকে উঠে সোজা তার বন্ধুদের নিকট চলে গেল। তাকে আসতে দেখে মুশরিকগণ পরস্পর বলাবলি করতে থাকল, ‘আল্লাহর শপথ! আবুল ওয়ালিদ তোমাদের নিকট সেই মুখ দিয়ে আসছে না যে মুখ নিয়ে সে গিয়েছিল।’ তারপর আবুল ওয়ালিদ যখন তাদের নিকট এসে বসল তখন তারা জিজ্ঞেস করল, ‘আবুল ওয়ালিদ! পেছনের খবর কী?

 

সে বলল, ‘পেছনের খবর হচ্ছে আমি এমন এক কথা শুনেছি যা কোনো দিনই শুনিনি। আল্লাহর শপথ! সে কথা কবিতা নয়, যাদুও নয়। হে কুরাইশগণ! আমরা কথা মেনে নিয়ে ব্যাপারটি আমার উপর ছেড়ে দাও। (আমার মত হচ্ছে) ওই ব্যক্তিকে তার অবস্থায় ছেড়ে দাও। সে পৃথক হয়ে থেকে যাক।

 

আল্লাহর কসম! আমি তাঁর মুখ থেকে যে বাণী শ্রবণ করলাম তা দ্বারা অতিশয় কোনো গুরুতর ব্যাপার সংঘটিত হয়ে যাবে। আর যদি তাকে কোনো আরবি হত্যা করে ফেলে তবে তো তোমাদের কর্মটা অন্যের দ্বারাই সম্পন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু এ ব্যক্তি যদি আরবিদের উপর বিজয়ী হয়ে প্রাধান্য বিস্তারে সক্ষম হয় তাহলে এর রাজত্ব পরিচালনা প্রকৃতপক্ষে তোমাদেরই রাজত্ব হিসেবে গণ্য হবে! এর অস্তিত্ব বা টিকে থাকা সবচাইতে বেশি তোমাদের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।’

 

লোকেরা বলল, ‘আবুল ওয়ালিদ! আল্লাহর কসম, তোমার উপরও তাঁর যাদুর প্রভাব কাজ করেছে।’ উতবা বলল, ‘তোমরা যা-ই মনে করো না কেন, তার সম্পর্কে আমার যা অভিমত আমি তোমাদের জানিয়ে দিলাম। এখন তোমরা যা ভালো মনে করবে তা-ই করবে।’ (ইবনু হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃ. : ২৯৩-২৯৪)

 

অন্য এক বর্ণনায় এটা উল্লিখিত হয়েছে যে, ‘নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তেলাওয়াত আরম্ভ করেছিলেন তখন উতবা নীরবে শুনতে থাকে। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ আয়াতে কারিমা পাঠ করেন, ‏‏فَإِنْ أَعْرَضُوْا فَقُلْ أَنذَرْتُكُمْ صَاعِقَةً مِّثْلَ صَاعِقَةِ عَادٍ وَثَمُوْدَ‏‏  এরপরও তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বলো, আমি তোমাদেরকে আকস্মিক শাস্তির ভয় দেখাচ্ছি; আদ ও সামুদের (উপর নেমে আসা) আকস্মিক শাস্তির মতো।’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত : ১৩)

 

এ কথা শোনামাত্রই উতবা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়াল এবং এটা বলে তার হাত রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখের উপর রাখল যে, ‘আমি আল্লাহর মাধ্যম দিয়ে এবং আত্মীয়তার প্রসঙ্গটি স্মরণ করিয়ে কথা বলছি যে, এমনটি যেন না করা হয়।’ 

 

আরও পড়ুন: শতাধিক লিটলম্যাগ নিয়ে ইসলামি বইমেলায় তরুণদের উচ্ছ্বাস


সে এ ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছিল যে, প্রদর্শিত ভয় যদি এসেই যায়। এরপর সে সমবেত মুশরিকদের নিকট চলে যায় এবং তাদের সঙ্গে উল্লিখিত আলাপ আলোচনা করে। (তাফসির ইবনু কাসির, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. : ১৫৯-১৬১)
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন