নড়াইলে গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ, পলাতক স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন

৩ দিন আগে
নড়াইলের লোহাগড়ায় জান্নাতি ইসলাম (১৮) নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। ঘটনার পর থেকে স্বামী সাজ্জাদ মিয়া (৩০) ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছেন।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় লোহাগড়া উপজেলার চর-শালনগর গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে জান্নাতির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত জান্নাতি একই উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মিটুল মোল্যার মেয়ে এবং চর-শালনগর গ্রামের দাউদ মিয়ার ছেলে সাজ্জাদ মিয়ার স্ত্রী।

 

নিহতের স্বজনরা জানান, চলতি বছরের জুনে পারিবারিকভাবে জান্নাতির বিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের সাজ্জাদের সঙ্গে সম্পন্ন হয়। দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের দিন ৩০ জন বরযাত্রীসহ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে জান্নাতিকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর কথা ছিল। তবে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে জান্নাতির পরিবার চুক্তি অনুযায়ী বরযাত্রীদের খাইয়ে মেয়েকে বিদায় দিতে পারেনি। ফলে সাজ্জাদের পরিবার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। তখন থেকেই সাজ্জাদ ও তার পরিবার যৌতুকের দাবিতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করেন।

 

আরও পড়ুন: পরিবারের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে গলা কেটে মেয়েকে পুকুরে ফেলে দিল বাবা!

 

পারিবারিক কলহের কারণে গত মাসের ৩০ তারিখে জান্নাতি তার বাবার বাড়িতে ফিরে যান। এরপর তিন দিন পর প্রথম দফায় সাজ্জাদ নিজেই শ্বশুরবাড়িতে এসে জান্নাতিকে ফেরত নিতে চেষ্টা করেন, কিন্তু সেখানে তার বাবা-মায়ের উপস্থিতিতে জান্নাতি মারধরের শিকার হন। পরে জান্নাতির মা তার জামাইকে বেশ অপমানজনকভাবে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

 

সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুর ১২ টার দিকে সাজ্জাদ ও তার মা জান্নাতির পরিবারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে তাকে বাবার বাড়ি থেকে অটোভ্যানযোগে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে বেলা দেড়টার দিকে সাজ্জাদের মুঠোফোন থেকে জানানো হয় যে, জান্নাতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং তাকে লোহাগড়া হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে।

 

এরপর জান্নাতির মা-বাবা লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে অন্যান্য বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতেও খোঁজখবর নেন। পরে স্থানীয় একজনের ফোনে জানা যায়, সাজ্জাদের বাড়ির সামনের রাস্তার ওপর অটোভ্যানে জান্নাতির মরদেহ পড়ে আছে। তবে সাজ্জাদের বাড়িতে তালা ঝুলছিল এবং পরিবার লাপাত্তা ছিল। পরে লোহাগড়া থানা পুলিশের একটি দল মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

 

আরও পড়ুন: আদালতে দুই কিশোরের স্বীকারোক্তি / টেকনাফে কানের দুলের জন্য ৪ বছরের শিশুকে গলাটিপে হত্যা!

 

সোমবার রাতে লোহাগড়া থানায় নিহত জান্নাতির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হলে তারা অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকেই সাজ্জাদ ও তার পরিবারের সদস্যরা জান্নাতিকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করছিলেন। সাজ্জাদ ও তার পরিবারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে মেয়েকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে।

 

ঘটনার পর অভিযুক্ত সাজ্জাদ মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহটি সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এছাড়া, নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন