নৌপথে সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় মাল আনতে দিতে হয় ১০ বার চাঁদা!

১ দিন আগে
সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার কেরানিগঞ্জ পর্যন্ত ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথে চলছে দীর্ঘদিনের চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য। গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে প্রতিদিন শতাধিক নৌযান কয়লা, চূনাপাথর, বালি ও পাথর পরিবহন করলেও, চাঁদাবাজদের কবলে পড়ে নৌযান মালিক, শ্রমিক ও আমদানিকারকরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

তাহিরপুর ও ছাতক উপজেলার বিভিন্ন শুল্ক স্টেশন- বড়ছড়া, চারাগাঁও, বাগলী ও ছাতকের সোনালী চেলা দিয়ে ভারতের মেঘালয় থেকে আমদানি করা পণ্য ছোট নৌকায় করে পাটলাই নদীতে এনে বড় নৌকায় ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু এই রুটে ৮টি থেকে ১০টি স্পটে গড়ে প্রতিটি নৌযানকে দিতে হয় ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা।


নৌযান চালক আব্দুল খালেক জানান, নদীপথে চলা শুরু করলেই একের পর এক চাঁদাবাজরা ছোট ছোট নৌকা নিয়ে এসে ঘিরে ফেলে। নির্দিষ্ট হারে টাকা না দিলে চালকদের মারধর, মেশিন বন্ধ করে হ্যান্ডেল নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। কেউ প্রতিবাদ করলেই পরবর্তীতে নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।


ভৈরবের চালক আব্দুল মালিক বলেন, 'আমরা প্রায় দুই দশক ধরে এই রুটে চাঁদা দিয়ে মাল পরিবহন করছি। রশিদ দিলেও সেখানে প্রকৃত টাকার চেয়ে অনেক কম উল্লেখ করে। প্রতিবাদ করার সাহস পাই না, কারণ পরেরবার আবার আসতে হবে।'


ঢাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, 'চাঁদাবাজির কারণে পরিবহন খরচ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এতে ব্যবসা পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। অনেকে এই রুট বাদ দিয়ে বিকল্প খুঁজছেন।'


আরও পড়ুন: যৌথ বাহিনীর অভিযানে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজসহ আটক ৭০


তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি খসরুল আলম বলেন, সুনামগঞ্জে প্রায় দেড় হাজার আমদানিকারক রয়েছেন। কিন্তু চাঁদাবাজির কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা এই এলাকায় আর বিনিয়োগ করতে চাইছেন না।


দীর্ঘ এই নদীপথে নেই কোনো কার্যকর নৌপুলিশ টহল। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, 'জেলার অংশে নিয়মিত অভিযান চালানো হলেও, বাইরের জেলাগুলোয় নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ছে। এ জন্য সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি।'


সুনামগঞ্জের পাটলাই, বৌলাই, সুরমা, কালনী, কুশিয়ারা, ভৈরবের মেঘনা, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা ও ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজদের তৎপরতা সীমাহীন। সব ঋতুতে- শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা চাঁদাবাজি চলছে অনবরত।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন