বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি যেন এক জীবন্ত ছবি। শান্ত কাপ্তাই হ্রদের বুকে বোটের ছাদে বসে ভেসে যাওয়া, দুই পাশে সবুজ পাহাড় আর মাথার ওপরে সাদা মেঘের ভেলা, এই দৃশ্য হৃদয়ে নাড়া দেয় প্রতিটি ভ্রমণকারীর।
ফেনী থেকে আগত শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে এমন নয়নাভিরাম স্থান আছে তা আগে জানতাম না। প্রকৃতির এত কাছে এসে আমি অভিভূত।
কুমিল্লা থেকে আসা রেজিয়া সুলতানা বলেন, বোটের ছাদে বসে প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে সুবলংয়ে পৌঁছেছি। বিশ্বাস হচ্ছিল না এটা আমাদের দেশ! পাহাড় আর ঝরনার এমন রূপ আমৃত্যু মনে থাকবে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মো. শরিফ বলেন, সুবলং ঝরনা বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হলেও এখানে নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক কিংবা ইন্টারনেট সুবিধা। এতে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন মনে হয়। তাছাড়া ঝরনায় যাওয়ার রাস্তাটিও অনেক খারাপ। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।
যদিও কর্তৃপক্ষ ঝরনার পিচ্ছিল পাথুরে পথে ওঠার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তবুও কিছু 'অতি উৎসাহী' পর্যটক উপেক্ষা করছেন নিরাপত্তা নির্দেশনা। তারা প্রায় একশ ফুট উঁচুতে উঠে যাচ্ছেন ঝরনার বিপজ্জনক এলাকায়, যা প্রায়শই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এমনই এক পর্যটক তরিকুল ইসলাম বলেন, রাঙ্গামাটি এসে ওখানে না উঠলে কী হয়! তাই উঠলাম, ভিজলাম। যদিও একবার পা ফসকে গিয়েছিল, নিজেকে সামলে নিয়েছি। জানি কাজটা ঠিক হয়নি, তবে করেছি অ্যাডভেঞ্চারের জন্য।
সুবলং ঝরনার ইজারাদার জয় চাকমা জানান, আমরা বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও পর্যটকরা ঝরনার বিপজ্জনক জায়গায় উঠে যাচ্ছেন। এতে আমরাও দুশ্চিন্তায় থাকি, কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে। পর্যটন পুলিশের একটি টিম সেখানে থাকলে ভালো হয়।
আরও পড়ুন: এই বর্ষায় ঘুরে আসুন রাঙ্গামাটি
এ বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ, রাঙ্গামাটি জোনের পরিদর্শক এ কে এম মাহাবুবুল আলম বলেন, আমরাও অভিযোগ পেয়েছি। পর্যটকদের নিরাপত্তায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার বলেন, ঝরনায় চলাচলের রাস্তা উন্নয়নে আমাদের প্রকৌশল বিভাগ শিগগিরই স্থান পরিদর্শন করবে। তারা সিঁড়ি, ওয়াশ ব্লক ও চেঞ্জিং রুমের জন্য স্থান নির্বাচন করবেন। এ বছরই কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদের অনুরোধ করবো, যেন নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান করে। আশা করি এসব সমস্যা ভবিষ্যতে থাকবে না।
রাঙ্গামাটি শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় সুবলংয়ে। যেখানে রয়েছে দুটি প্রাকৃতিক ঝরনা। পথেই মেলে শান্ত হ্রদ, সবুজ পাহাড় আর অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্যের মেলবন্ধন।