নাটোরের হরিজন সম্প্রদায়: ৫০ বছরেও মেলেনি ভালো আবাসস্থল, বঞ্চিত শিক্ষায়ও

১ সপ্তাহে আগে
চরম বৈষম্যের শিকার নাটোরের হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ। স্থানান্তরের ৫০ বছর পার হলেও এখনও ভালো আবাসস্থল থেকে বঞ্চিত তারা; বাস করছেন শহরের উত্তর আলাইপুর এলাকার হরিজন পল্লীর জরাজীর্ণ বাড়িতে। একই সঙ্গে উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার শিশুরা। পৌরসভা জানিয়েছে, জায়গার অভাবে এখনো তাদের জন্য স্থায়ী বাসস্থান করা সম্ভব হয়নি। তবে শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।

১৮৬৯ সালে নাটোর পৌরসভা স্থাপিত হওয়ার পর শহরের পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে ব্রিটিশ সরকার হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষদের নাটোরে নিয়ে আসেন। প্রথমে পৌর সংলগ্ন নারদ নদের তীরে তাদের আবাসস্থল থাকলেও ৫০ বছরের বেশি সময় আগে তাদের উত্তর আলাইপুর এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। তবে দীর্ঘ সময় পার হলেও তারা এখনো ভালো আবাসস্থল পায়নি।

 

জরাজীর্ণ বাড়িতে এক ঘরে ৬-৭ জন পরিবার একসঙ্গে বসবাস করছেন। বর্ষার সময় বাড়ির সামনে পানি জমে থাকে। এছাড়া হরিজন পল্লীতে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা বহুদিন সংস্কার না হওয়ায় কাদা ও গর্তে ভরা। পৌরসভা সময়ে সময়ে নতুন বাসস্থানের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্য লক্ষণ জামাদার জানান, ‘ব্রিটিশ আমল থেকে আমরা বঞ্চিত। দীর্ঘদিন থেকে পৌরসভা বাসস্থানের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।’

 

হরিজন সম্প্রদায়ের আরেক সদস্য সমিতা রাণী বলেন, ‘আমরা মানুষ, অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদের থেকে কম নই। তবে সরকারও আমাদের দিকে নজর দেয় না। একই ঘরে পুরো পরিবার বসবাস করা খুব কঠিন।’

 

আরও পড়ুন: বরিশালে হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা জারি

 

নারায়ণ জামাদার বলেন, ‘বাসস্থান ছাড়াও ড্রেনের সমস্যা আছে। বর্ষায় বাড়ির সামনে পানি জমে যায়। কলোনীতে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা খানা খন্দে ভরা, তাই যানবাহন আসতে চায় না।’

 

বাসস্থান না পাওয়ার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হরিজন সম্প্রদায়ের শিশুরা। পৌরসভা ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি প্রাথমিক পাটশালায় তারা শিক্ষালাভ করতে পারে, কিন্তু হরিজন পল্লীর বাইরের বিদ্যালয়গুলো তাদের ভর্তি দেয় না। শিশুদের মধ্যে কেউ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে পারছেন না, তাই লেখা-পড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

 

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মন্দির ভিত্তিক প্রাথমিক পাটশালার শিক্ষিকা সোমা রায় বলেন, ‘এই পাটশালাই শিশুদের একমাত্র শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যম। যদি পৌরসভা নজর দেয়, তারা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারবে।’

 

নাটোর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হক জানান, ‘জায়গার অভাবে এখনো তাদের বাসস্থান করা সম্ভব হয়নি। হরিজন সম্প্রদায়ের শিশুরা উচ্চ শিক্ষা নিতে চাইলে পৌরসভা সহায়তা করবে। এছাড়া ড্রেন দখল করে নেয়ায় এখানে জলাবদ্ধতার সমস্যা হচ্ছে।’

 

উল্লেখ্য, নাটোর হরিজন পল্লীতে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার বসবাস করছেন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন