কুরআন ও হাদিসে তাকওয়ার গুরুত্ব অসংখ্যবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাথেই আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল।” (সুরা নাহল: ১২৮)
তাকওয়া অবলম্বনকারী ব্যক্তি শুধু দুনিয়াতে নয়, আখেরাতেও আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করবেন। তারা আল্লাহর সাহায্য, মাগফিরাত, রিজিকের প্রশস্ততা এবং মর্যাদা পাবেন। আর তাকওয়া থেকে বঞ্চিত মানুষ হবে মহা ক্ষতিগ্রস্ত।
১. আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যের সুসংবাদ মুত্তাকির জন্য
২. মুত্তাকির জন্য মাগফিরাতের সুসংবাদ
৩. মুত্তাকির সকল কাজ সফল হওয়ার সুসংবাদ
৪. মুত্তাকির জন্য রিজিকের প্রশস্থতা বাড়িয়ে দেয়া
৫. মুত্তাকির জন্য মান-মর্যাদার সুসংবাদ
৬. মুত্তাকির জন্য জাহান্নামের শাস্থির ভয় থেকে মুক্ত থাকার সুসংবাদ
আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে থাকেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল। (সুরা নাহল, আয়াত:- ১২৮)
আল্লাহকে ভয় করো নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সুরা আনফাল, আয়াত: ৬৯) যে তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার সব বিষয় সহজ করে দেন। (সুরা ত্বালাক, আয়াত:- ০৪) যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। (সুরা ত্বালাক, আয়াত:- ০৩-০৪) নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সম্মানিত ব্যক্তি হচ্ছেন মুত্তাকিগণ। (সুরা হুজরাত, আয়াত:- ১৩)
আরও পড়ুন: রোজার কাজা, কাফফারা ও ফিদিয়া কী
যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং পরিশুদ্ধ থাকে তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা কখনো দুঃখিত হবে না। (সুরা আরাফ, আয়াত:- ৩৫)যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে তারা থাকবে উদ্যাম রাজী ও নহরে। সত্যিকারের মর্যাদাপূর্ণ আসনে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মহা সম্রাটের সান্যিধ্যে। (সুরা কামার, আয়াত:- ৫৪-৫৫) আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, প্রিয় নবীকে (সা.) প্রশ্ন করা হলো, কোন ব্যক্তিকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে, নবীজি (সা.) বললেন, তাকওয়া (আল্লাহর ভীতি) ও উত্তম চরিত্র। (তিরমিজি, হাদিস:- ২০০৪)
নোমান বিন বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রসুল (সা.) বলতে শুনেছি, হালালও সুস্পষ্ট, হারামও সুস্পষ্ট, এ দুটোর মাঝে যা আছে তা মুতাশাবিহাত। (সন্দেহযুক্ত) অনেক মানুষ এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখে না। সুতরাং যে সুবহাত বা সন্দেহ এড়িয়ে চলবে সে তার দ্বীন ও সম্মান নিয়ে নিরাপদে থাকবে। আর যে সুবহাতে জড়িয়ে পড়বে। সে হারামে নিপাতিত হবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস:- ১৫৯৯)
হজরত আবু বকরের এক গোলাম ছিলেন যার উপার্জনের একটি অংশ তিনি পেতেন, আবু বকর তা খেতেন একদিন সে কিছু খাবার নিয়ে এলো আবু বকর তা থেকে খেলেন, গোলাম বললেন, আপনার কি জানা আছে আমি এ খানা কিভাবে লাভ করেছি। তিনি জানতে চাইলেন, গোলম বললেন, জাহেলী যুগে আমি এক ব্যক্তির জন্য গনকের কাজ করেছিলাম যদিও আমি গনক ছিলাম না। গনক সেজে ধোঁকা দিয়েছিলাম আজ তার সাথে দেখা হলেও তিনি আমাকে বিনিময়ে এ খাদ্য দেন। একথা শুনে আবু বকর গলায় হাত ঢুকিয়ে বমি করে তা বের করে ফেলেন। (সুহিহ বুখারি, হাদিস:- ৩৮৪২)
তাকওয়া শুধু আল্লাহভীতি নয়, বরং এটি মানুষের জীবনকে সুপথে পরিচালিত করার এক মহিমান্বিত গুণ। যার অন্তরে তাকওয়া থাকবে, সে প্রতিটি কাজে আল্লাহর ভয়কে প্রাধান্য দেবে, হালাল-হারাম বাছাইয়ে সতর্ক থাকবে এবং সন্দেহজনক বিষয় থেকেও দূরে থাকবে। তাকওয়া অর্জনকারীদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ, আখেরাতের শান্তি ও দুনিয়ার সম্মান। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—“যে জিনিস মানুষকে সর্বাধিক জান্নাতে প্রবেশ করাবে তা হলো তাকওয়া (আল্লাহভীতি) ও উত্তম চরিত্র।” (তিরমিজি: ২০০৪) অতএব, আসুন আমরা সবাই তাকওয়া অবলম্বন করি, আল্লাহভীতিকে জীবনের মূলমন্ত্র বানাই এবং জান্নাতের অনন্ত শান্তির পথে অগ্রসর হই।