জাপানে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা লাখ ছুঁইছুঁই

বয়স যেন শুধুই সংখ্যা। সে কথাই বারবার প্রমাণ করে চলেছেন জাপানের মানুষ। ১০০ বছর বা তার বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যার গড় বিচারে বিশ্বে আরও একবার এগিয়ে থাকল এশিয়ার দেশটি। ‘সূর্যোদয়ের দেশে’ প্রায় শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় এক লাখ।

গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) ১০০ বছর বা তার বেশি বয়সি মানুষের পরিসংখ্যান তুলে ধরে জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে শতবর্ষী বা তার বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা ৯৯ হাজার ৭৬৩। যা গত বছরের তুলনায় সাড়ে চার হাজার বেশি।

 

যদিও কিছু গবেষণায় এই সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। তবে বিশ্বের মধ্যে শতায়ু ও তার বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যায় জাপান অন্য অনেক দেশের থেকে এগিয়ে, তা স্বীকার করছেন সকলেই।

 

জাপানে বর্তমানে সবচেয়ে প্রবীণ নাগরিক হলেন এক নারী। তার বয়স ১১৪। নাম শিগেকো কাগাওয়া। কিয়োটোর কাছে নারা অঞ্চলে বাস করেন তিনি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। ৮০ বছর বয়সেও গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে, হাতে ডাক্তারের ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন রোগীদের বাড়ি বাড়ি।

 

১১৪ বছর বয়সেও এখনও তিনি দৈনন্দিন প্রায় সব কাজই নিজেই করেন। দৃষ্টিশক্তিও প্রখর। লাগে না চশমা। শরীরে তেমন কোনো বড় ধরনের রোগ বাসা বাঁধেনি। আর সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষের নাম কিয়োতাকা মিজুনো। শিগেকোর থেকে তিন বছরের ছোট তিনি।

 

আরও পড়ুন: কে হতে পারেন জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?

 

১০০ বছর বা তার বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যায় জাপান এখন শীর্ষে হলেও ১৯৬০-এর দশকে তা ছিল না। সে সময় জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যার বিচারে তালিকায় সবচেয়ে নীচে ছিল জাপান।

 

১৯৬৩ সালে জাপান সরকার শতবর্ষী বা তার বেশি মানুষদের জরিপ শুরু করে। ওই বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শতবর্ষী নাগরিকের সংখ্যা ছিল ১৫৩। ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৮১ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজারে আর ১৯৯৮ সালে ১০ হাজার। এখন সেই সংখ্যা এক লাখ ছুঁইছুঁই।

 

কেন জাপানে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে? কী রহস্য এর নেপথ্যে? বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ আয়ুষ্কালের কারণ মূলত হৃদরোগ বা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কম হওয়া। জাপানিদের মধ্যে স্থূলতার হার বিশ্বের অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেকটাই কম। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে স্থূলতার হার কম দেখা যায়।

 

আরও পড়ুন: দলের ভাঙন ঠেকাতে পদত্যাগ করলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা

 

জাপানের মানুষের খাদ্যাভ্যাসও বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকার অন্যতম কারণ। অন্য দেশে যেখানে খাদ্য তালিকায় চিনি ও লবণের পরিমাণ বাড়ছে, সেখানে জাপান এই দুই দ্রব্য প্রায় বর্জনই করে ফেলেছে।

 

তবে শুধু খাদ্যাভ্যাস নয়, জাপানিদের বেশি বয়স অবধি বাঁচার নেপথ্যে আরও একটি কারণ হল তাদের জীবনধারা। অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত জাপানিরা হাঁটাচলা করেন, ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে গণপরিবহণ ব্যবহারেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

]]>