বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে মাত্র আধা ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দরের চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) বার্থিং নিচ্ছে অন্তত ৬টি জাহাজ। জেনারেল কার্গো বার্থেও (জিসিবি) একাধিক জাহাজ ভেড়ার সুযোগ পেয়েছে। আর একই সময়ে বন্দর ছেড়ে গেছে রফতানি পণ্য নিয়ে তিনটি ফিডার ভ্যাসেল।
অথচ গত কয়েকদিন আগেও এসব জাহাজকে বন্দরে বার্থিং পেতে বহির্নোঙরেই অপেক্ষা করতে হতো ৭ থেকে ৮ দিন। এখন তা নেমে এসেছে ১২ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ একদিনে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমডোর আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ বলেন, ‘ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যাতে জাহাজগুলো বন্দরে এসে দ্রুত মালামাল খালাস করতে পারে, সে লক্ষ্যেই কাজ চলছে।’
আরও পড়ুন: কনটেইনার জট ঠেকাতে কি উদ্যোগ নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর?
চট্টগ্রাম বন্দর এবং বহির্নোঙরে বর্তমানে ৮৬টি জাহাজের অবস্থান রয়েছে। এরমধ্যে প্রধান জেটির ১০টিসহ কনটেইনারবাহী জাহাজ রয়েছে ১৬টি। অবশ্য জুন-জুলাই মাসে আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যা ১২০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
বাংলাদেশের জন্য পণ্য নিয়ে আসা ফিডার এবং মাদার ভ্যাসেলগুলোকে এখন আর অলস বহির্নোঙরে বসে থাকতে হচ্ছে না। দেশের জলসীমায় প্রবেশের কয়েকঘণ্টা মধ্যেই বার্থিয়ের সুযোগ পাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে। তবে শিপিং ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বর্তমানে জাহাজ জট পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও, তার আগে বন্দরের প্রধান জেটিতে বার্থিং পেতে দেরি হওয়ায় কনটেইনারবাহী জাহাজগুলোতে বর্হিনোঙ্গরেই অলস বসে থাকতে হয়েছে। আর তাতে জাহাজ ভেদে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার থেকে শুরু করে ২০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত ড্যামারেজ হয়েছে।
একইসঙ্গে মেইন লাইন অপারেটরদের কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছিল। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, 'বন্দর ও কাস্টমসকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখতে হবে, যাতে কাজের কোনো সমস্যা না হয়। বিশেষ বিশেষ বিবেচনায় এসব কার্যক্রমকে জরুরি সেবা হিসেবে দেখতে হবে। এটি করতে পারলে জটের মতো সমস্যা তৈরি হবে না। ফলে কমে আসবে ক্ষতির পরিমাণও।'
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট, নিরসনে এনবিআরের কঠোর নির্দেশনা
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে আটকে পড়া কনটেইনারের বাইরের ইয়ার্ডগুলোতে পাঠিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ডেলিভারিতে গতি আনায় কনটেইনার জটও এখন নিয়ন্ত্রণে। ৫৯ হাজার ধারণ ক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে কনটেইনার রয়েছে ৪৩ হাজার ৪৪৭ টিইইউএস।
এ অবস্থায় আটকে পড়া কনটেইনারের ওপর ৪ গুণ হারে পেনাল রেন্ট আদায় স্থগিত করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। মারাত্মক কনটেইনার জট সৃষ্টি হওয়ায় গত ১০ মার্চ এই পেনাল রেন্ট জারি করেছিল বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, আমদানিকারকদের অনুরোধে এ মাসের জন্য ৪ গুণ হারে আরোপিত পেনাল রেন্ট আদায় স্থগিত করা হয়েছে।
খাদ্য পণ্য-সিমেন্ট ক্লিংকার-লোহার স্ক্র্যাপসহ বাল্ক পণ্যবাহী জাহাজগুলো বহির্নোঙ্গরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাসে করায় তেমন জটিলতা হয় না। কিন্তু কনটেইনারবাহী জাহাজগুলোকে লোড-আনলোডের জন্য বন্দরের জেটির প্রয়োজন হওয়ায় জটের সৃষ্টি হয়।
]]>