গাজায় ১০৪ ফিলিস্তিনি হত্যার পর ফের যুদ্ধবিরতি ‘মেনে চলার’ ঘোষণা ইসরাইলের

৩ সপ্তাহ আগে
গাজা উপত্যকাজুড়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিমান হামলা চালিয়ে ৪৬ শিশুসহ ১০৪ ফিলিস্তিনি হত্যার পর যুদ্ধবিরতি ‘মেনে চলার’ ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতি মেনে চলা শুরু করেছে। খবর আল জাজিরার।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে গাজাজুড়ে মুহূর্মুহূ হামলা চালায় ইসরাইলি যুদ্ধবিমান। হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

 

ইসরাইলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানায়, তারা মার্কিন-মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের জবাবে ‘ডজন ডজন সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু ও যোদ্ধার’ ওপর হামলা চালিয়েছে।

 

ইসরাইল বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালালেও হামাস শান্তি চুক্তির শর্ত মেনেই এক এক করে ইসরাইলি জিম্মিদের ফেরত দিচ্ছে। গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) সেই রকমই এক বন্দির মৃতদেহ ইসরাইলের হাতে তুলে দেয় ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি।

 

কিন্তু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। হামাসের বিরুদ্ধে ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ নেয়া হবে। কারণ আগের দিন তারা যে মরদেহ ফেরত দিয়েছিল, তা বাকি থাকা ১৩ জিম্মির কারও নয়।

 

আরও পড়ুন: গাজায় ‘শক্তিশালী হামলা’ চালাতে নেতানিয়াহুর নির্দেশ

 

ইসরাইল জানায়, ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গেছে, হামাসের ফেরত দেয়া সর্বশেষ দেহাবশেষটি ওফির জারফাতি নামে এক ইসরাইলি জিম্মির, যাকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলার পর গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং ওই বছরের নভেম্বরে তার আংশিক দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।

 

ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ অভিযোগ করেন, হামাস গাজায় একজন ইসরাইলি সেনাকে হত্যা করেছে এবং নিহত জিম্মিদের মরদেহ ফেরতের শর্ত ভঙ্গ করেছে।

 

আইডিএফ এক ভিডিও প্রকাশ করে জানায়, ফুটেজে দেখা যায়, হামাস যোদ্ধারা পূর্ব গাজায় এক স্থাপনা থেকে মরদেহের অংশ সরিয়ে কাছেই কবর দেয় এবং পরে রেডক্রসকে ডেকে ‘জিম্মির মরদেহ আবিষ্কারের অভিনয়’ করে। তবে হামাস এ অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে নাকচ করে দেয় এবং বলে, ইসরাইল ‘নতুন আগ্রাসনের অজুহাত তৈরি করার চেষ্টা’ করছে।

 

এরপর এদিন রাতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, সেনাবাহিনীকে ‘প্রবল পাল্টা হামলা’ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন নেতানিয়াহু। এরপরই গাজায় তীব্র বিমান হামলা শুরু হয় এবং টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে সেই হামলা।

 

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহুর নির্দেশে গাজায় ‘শক্তিশালী হামলায়’ অন্তত ৩০ জন নিহত

 

বিমান হামলা গাজা সিটি ও উত্তরের বেইত লাহিয়া, মধ্যাঞ্চলের বুরেইজ ও নুসেইরাত শরণার্থী শিবির এবং দক্ষিণের খান ইউনুস এলাকায় বাড়ি, স্কুল ও আবাসিক ভবনগুলোতে আঘাত হানে। গাজার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলা চলাকালে শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ‘আগুন ও ধোঁয়ার স্তম্ভ’ দেখা যায় এবং একের পর এক বিস্ফোরণে গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে।

 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় ১০৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪৬ শিশু ও ২০ নারী রয়েছে, আহত হয়েছেন আরও ২৫০ জনের বেশি। গাজা সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানায়, দক্ষিণ গাজার সাবরা পাড়ায় আল-বান্না পরিবারের বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে তিন নারী ও এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

 

বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের ব্লক ৭-এ আবু শারার পরিবারে পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন। এছাড়া খান ইউনুসের উত্তর-পশ্চিমের এক সড়কে বিমান হামলায় আরও পাঁচজন নিহত হন। ১৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে ইসরাইলি বাহিনী জানায়, তারা ‘ফের যুদ্ধবিরতি মেনে চলা শুরু করেছে।’

 

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবশেষ হামলা নিয়ে ইসরাইলের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। তিনি বলেছেন, একজন সেনাকে হত্যার পর ইসরাইল ‘প্রতিঘাত’ করেছে। তবে এতে কোনোভাবেই যুদ্ধবিরতি ‘ঝুঁকির মুখে পড়বে না’। হামাসকে ‘ভাল আচরণ’ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

 

যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় হওয়অ যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ। চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসকে ৪৮ জন জীবিত ও মৃত জিম্মি ফেরত দিতে হবে।

 

গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ১৩ অক্টোবর হামাস ২০ জন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। বিনিময়ে ২৫০ ফিলিস্তিনি বন্দি ও গাজা থেকে আটক ১ হাজার ৭১৮ জনকে মুক্তি দেয় ইসরাইল।

 

আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় ইসরাইলের হামলা, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯১

 

এরপর আরও ১৩ ইসরাইলি ও ২ বিদেশি জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ১৯৫ ফিলিস্তিনির দেহ ফেরত দেয় ইসরাইল। গাজায় এখনও ১৩ জন মৃত জিম্মির দেহাবশেষ রয়েছে। যার মধ্যে ১১ জন ইসরাইলি, একজন তানজানিয়ান ও একজন থাই নাগরিক। ইসরাইল এখন দেহাবশেষগুলো দ্রুত ফিরিয়ে দিতে চাপ দিচ্ছে।

 

তবে হামাস নেতা ও যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়া গত শনিবার বলেন, ইসরাইলি হামলায় ‘গাজার ভূচিত্র বদলে গেছে’ এবং যারা মরদেহ কবর দিয়েছিল, তারা দাফনস্থল ভুলে গেছে। তবে ইসরাইলি সরকার দাবি করেছে, হামাস সব মৃতদেহের অবস্থান জানে।

 

চুক্তি অনুযায়ী হামাস নির্ধারিত সময়ে সব মরদেহ ফেরত না দিতে পারায় ট্রাম্প শনিবার সতর্ক করে বলেন, ‘অবশিষ্ট দেহগুলো দ্রুত হস্তান্তর করতে হবে। না হলে অন্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলো পদক্ষেপ নেবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন