গাইবান্ধায় কোটি টাকার রাস্তার গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রির অভিযোগ

২ দিন আগে
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে কোটি টাকার মূল্যের সরকারি রাস্তার গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে সমবায় সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, রাস্তার দু’পাশের জমির মালিকদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের অর্থও দেয়া হয়নি। এ ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে ‘কেশবপুর মামা-ভান্নে সমবায় সমিতি’ নামে একটি স্থানীয় সংগঠন কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের সগুনার মোড় থেকে মেঘার মোড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের দু’পাশে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগায়।

 

সম্প্রতি সমিতির সভাপতি মো. আতিয়ার রহমান উপজেলা প্রশাসনের কাছে গাছ কাটার অনুমতি চান। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ও মতামত দেয়ার জন্য একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, কমিটির মতামত গ্রহণ ও উপজেলা প্রশাসনের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে গাছ বিক্রির কথা ছিল।

 

কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী, বিক্রয় কমিটির সভাপতি ও কিশোরগাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক এবং সমিতির সভাপতি আতিয়ার রহমান প্রশাসনকে না জানিয়ে গোপনে নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে গাছ কাটা শুরু করেন। অনুমোদন ছাড়াই ইতিমধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, এবং প্রতিদিনই কাটার কাজ চলছে।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান ও সমিতির সভাপতি মনগড়া তালিকা তৈরি করে ও গোপন নিলাম দেখিয়ে প্রায় ১ হাজারেরও বেশি গাছের মধ্যে মাত্র ৮২৫টি দেখানো হয়েছে। প্রায় কোটি টাকার সমমূল্যের গাছ খাতা-কলমে মাত্র ৩৩ লাখ টাকায় বিক্রির হিসাব দেখানো হয়েছে। বাকি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

 

স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী খাজা মিয়া বলেন, ‘৩৩ লাখ টাকায় গাছ বিক্রির কথা বলা হলেও, আমার সঙ্গে সভাপতি আতিয়ার রহমান ৬৭ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। পরে তিনি আরও বেশি দামে গাছ বিক্রি করে আমার চুক্তির কাগজ জোর করে নিয়ে নেন এবং ৭ লাখ টাকা ফেরত দেন।’

 

আরও পড়ুন: গ্যাস সিলিন্ডারে লুকানো ১০ কেজি গাঁজাসহ মাদককারবারি শাহিন আটক

 

রাস্তার পাশে থাকা জমির মালিকদের অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী বিক্রির অর্থের ২০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাদের দেয়ার কথা থাকলেও, সেই অর্থও দেয়া হয়নি।

 

এক জমির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমাদের জমিতে ফসল ফলছে না। গাছ বিক্রির টাকায় আমাদের অংশ দেয়ার কথা থাকলেও দলীয় প্রভাবের কারণে কিছুই পাচ্ছি না।’

 

স্থানীয় বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গ্রামের অনেকে টেন্ডারে অংশ নিতে চেয়েছিল, কিন্তু কবে টেন্ডার হয়েছে তা কেউ জানে না। হঠাৎ দেখি রাস্তার গাছ কাটা শুরু হয়েছে।’

 

যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আতিয়ার রহমানকে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘গাছগুলোর নাম্বারিং অনেক আগেই মুছে গেছে। সব সরকারি নিয়ম মেনেই গাছ বিক্রি করা হয়েছে।’

 

এ বিষয়ে পলাশবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, ‘গাছ কাটার প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তবে কাটার অনুমতি দেয়া হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে গাছ কাটা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন