জেলা জুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু অ্যানথ্রাক্স। যদিও প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সার্বিক চেষ্টা চলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চরের কিসামত সদর গ্রামে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মুজিবুর রহমান মন্টু মেম্বারের বাড়িতে অসুস্থ একটি গরু জবাই করা হয়। এরপরই সেই গরুর মাংস কাটার একদিন পর ১১ জনের হাতে-পায়ে ও মুখে ফোসকা, কালো দাগ ও ক্ষত দেখা দেয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ জনে।
আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন সামিউল ইসলাম, সাহাদৎ হোসেন, সবুজ মিয়া, আজিজল হক, ভূট্ট মিয়া, আতিকুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, মোজাহার আলী, মোজাফ্ফর হোসেন, খতিব মিয়া, ফরিদুল হক, রুজিনা বেগম, মোজা মিয়া, মাহবুর রহমান, শাফিকুল ইসলাম, স্বাধীন মিয়া, সকিনা বেগম, তাইজল মিয়া, শিশু ছায়ফান, আফরিন বেগম, ছালদিয়া ইসলাম ও রইসুল মিয়া।

সংক্রমিত এলাকাগুলোতে প্রতিদিনই হঠাৎ গরু ও ছাগল অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠে আসছেন না, নেই পরামর্শ বা চিকিৎসা সহায়তা। বরং ৮০ পয়সার ভ্যাকসিনের পরিবর্তে কৃষকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
আক্রান্ত মোজা মিয়া বলেন, ‘সরকারি কোনো কর্মকর্তা আমাদের খোঁজ নেননি। নিজেরাই চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন সবাই আমাদের এড়িয়ে চলছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন গরু-ছাগল মারা যাচ্ছে, তবুও কর্মকর্তারা আসছেন না। যারা আসে, তারা টাকা ছাড়া ভ্যাকসিন দেয় না।’
আরও পড়ুন: অ্যানথ্রাক্সের টিকায় অনিয়মের অভিযোগ, ৮০ পয়সার বদলে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা!
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। গরু প্রতি ৮০ পয়সার বেশি কেউ যেন না নেয়, সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না এবং মৃত্যুঝুঁকি খুব কম। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।’
গাইবান্ধা আঞ্চলিক প্রাণী রোগ অনুসন্ধান ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘মৃত পশুর নমুনা পরীক্ষায় অ্যানথ্রাক্স জীবাণু পাওয়া গেছে। অসুস্থ পশু পরিচর্যায় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
অবসরপ্রাপ্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাসুদার রহমান সরকার বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু হঠাৎ মারা যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রিং ভ্যাকসিনেশন জরুরি। মৃত পশু অবশ্যই গভীর গর্তে পুঁতে ফেলতে হবে, কারণ জীবাণু মাটিতে ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।’
প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২ লাখ ৭০ হাজার গরু ও ৫০ হাজার ছাগলের মধ্যে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার পশুকে অ্যানথ্রাক্স ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে।
]]>