খুলনায় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি: মহানগরে ১২০, জেলায় ৮৫৭ মণ্ডপে পূজা

৩ সপ্তাহ আগে
খুলনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। মহানগর থেকে গ্রামাঞ্চল—সবখানেই মণ্ডপে চলছে প্রতিমা নির্মাণ, রঙের কাজ ও আলোকসজ্জার ব্যস্ততা। শিল্পীরা দিন রাত পরিশ্রম করে তুলছেন দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ ও মহিষাসুরের প্রতিমা।

আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে দেবীর আগমনী বার্তা ছড়িয়ে পড়বে। আর ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাঁচ দিনের পূজার আনুষ্ঠানিকতা। এ উপলক্ষে খুলনার সোনাপট্টি মন্দিরে ভারতের তামিল মন্দিরের আদলে বিশাল মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী বাজার কালীবাড়ী মন্দিরেও ভারতীয় মন্দিরের অনুকরণে বিশেষ প্যান্ডেল নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি আর্য্য ধর্মসভা মন্দির, শীতলাবাড়ী মন্দির, শিববাড়ী মন্দির, দোলখোলা ও দৌলতপুরসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে অনন্য রূপে সাজানো হচ্ছে মণ্ডপগুলো।
 

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খরসংগ এলাকায় জেলার সবথেকে বড় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এখানে সব থেকে বেশি ২০২টি প্রতিমা নির্মাণের কাজ চলমান। 


এই পূজা উদযাপন কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুব্রত সরকার বলেন,  ‘শারদীয় দুর্গোৎসব আমাদের কর্মসংস্থানের বড় উৎস। গত বছরের মতো এ বছরও খুলনা বিভাগের সবথেকে বড় আকারে উৎসবের আয়োজন হবে আমাদের এখানে। এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে।’
 

আরও পড়ুন: প্রতিমা বিসর্জনেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ

শিল্পীদের এই ব্যস্ততার মধ্যেই মণ্ডপে ভিড় জমতে শুরু করেছে দর্শনার্থীদের। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে আসছেন প্রতিমার কাজ কেমন হচ্ছে দেখতে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে উৎসবের আমেজ আরও বেশি। শহরের অলিগলিতে আলোকসজ্জার প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে, দোকানপাটেও জমে উঠছে উৎসবের কেনাকাটা।
 

খুলনা জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের তালিকা অনুযায়ী এবছর খুলনা মহানগরে ১২০টি এবং জেলায় ৮৫৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সবমিলে খুলনায় মোট ৯৭৭টি পূজা হবে। গত বছরের তুলনায় এবছর পূজা বেড়েছে ১০৫টি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০২৩ সালে খুলনায় সর্বাধিক ৯৯৩টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে সরকার পরিবর্তনের পর গত বছর জেলায় পূজা কমে দাঁড়ায় ৮৭২টিতে। এবছর আবারও সেই সংখ্যাটি বাড়লো।
 

মহানগরের মধ্যে সদর থানায় ২৪টি, সোনাডাঙ্গায় ১১টি, খালিশপুরে ৭টি, দৌলতপুরে ২৪টি, খানজাহান আলীতে ৮টি, হরিনটানায় ৫টি, লবনচোরায় ৯টি এবং আড়ংঘাটায় ৩২টি মণ্ডপে পূজা হবে। আর জেলায় ডুমুরিয়ায় ২১৪টি, পাইকগাছায় ১৪১টি, বটিয়াঘাটায় ১০৫টি, তেরখাদায় ৯৮টি, রূপসায় ৭৫টি, দাকোপে ৭৪টি, দিঘলিয়ায় ৬১টি, কয়রায় ৫৫টি ও ফুলতলায় ৩৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
 

পূজা উদযাপনকে নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের ত্রাণ বিভাগ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল অনুদান দেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ টহল থাকবে মন্ডপ এলাকায়।
 

আরও পড়ুন: ভারতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশ, খুশি পশ্চিমবঙ্গবাসী ও আমদানিকারকরা

খুলনার সাধারণ মানুষও পূজাকে ঘিরে উৎসবের আমেজে মেতে উঠেছেন। ভক্তদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের মানুষও প্রতিমা দর্শনে আসেন, এতে তৈরি হয় সম্প্রীতির পরিবেশ। নগরীর সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও পূজার অনুষ্ঠানকে ঘিরে নানা আয়োজন করছে।
 

শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, দুর্গোৎসব এখন হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মিলনমেলা। নগরী ও জেলায় উৎসবকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে এক ভিন্ন আবহ।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন