পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে যুক্ত হলো নতুন এক পালক; আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মর্যাদা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর এবার কক্সবাজারও জায়গা পেল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনাকারী তালিকায়। দৃষ্টিনন্দন নতুন টার্মিনাল ভবনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৭০০ ফুট, যার মধ্যে ১ হাজার ৭০০ ফুট সাগরের বুক জুড়ে নির্মিত।
গত রোববার (১২ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আহমেদ জামিল স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা করেছে সরকার। এতে বলা হয়, ‘দ্য সিভিল অ্যাভিয়েশন রুল, ১৯৮৪ এর রুল ১৬ এর সাব রুল (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করেছে। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
আরও পড়ুন: কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা, প্রজ্ঞাপন জারি
এদিকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরের পরিচালক গোলাম মুর্তজা হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা এটি বড় একটি সুখবর। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনায় আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে যেমন প্রস্তুত, ঠিক তেমনি কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধাও প্রস্তুত। আগমন বিভাগ নতুন টার্মিনালে হলেও; প্রস্থান আপাতত পুরোনো ভবন দিয়েই হবে। এখন এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট পরিচালনা জন্য যখন শিডিউল পাব, তখন আমরা নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারব।’
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বাড়বে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা। ব্যাবসা-বাণিজ্যেও আসবে নতুন গতি। তবে পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানোর দাবি সংশ্লিষ্টদের। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা করায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। অল্প সময়ের মধ্যে কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো চালু হবে; এখন সেটার অপেক্ষায় আছি। আশা করি, বিদেশি পর্যটক আসলে পুরো কক্সবাজার অঞ্চলের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটবে।’
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি এম এম সাদেক লাবু বলেন, ‘শুধু আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর দিয়ে কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটকের আশা করা যাবে না। বিদেশি পর্যটক এসে, থেকে এবং নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে হাসিমুখে ফেরত যাওয়ার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
এদিকে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির খবরে উচ্ছ্বসিত কক্সবাজারবাসী। তাদের আশা, শুধু পর্যটন নয়-বদলে যাবে পুরো অঞ্চলের জীবনযাত্রা। কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বহুদিনের স্বপ্ন ছিল আমাদের কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমান চলবে; এখন সেটা পূরণ হতে চলেছে।’
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হলে অর্থনীতির নতুন সূর্য উঠবে কক্সবাজারে
কক্সবাজার শহরের বাসিন্দা রিয়াজুল আলম বলেন, ‘বিদেশ থেকে মানুষ সরাসরি কক্সবাজারে এলে আমাদের সংস্কৃতি, হস্তশিল্পও বিশ্বমঞ্চে পরিচিতি পাবে।’ গাড়িচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালুর ফলে গাড়ি চালকদের আয় রোজগার বাড়বে, কাজের সুযোগ হবে।’
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা জেলাটিকে একটি বৈশ্বিক পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ। মূলত ২০২১ সালে চালু হওয়া এই উন্নীতকরণ প্রকল্পের লক্ষ্য কক্সবাজারকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক গেটওয়েতে রূপান্তরিত করা। একটি পৃথক রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প, যা বিদ্যমান ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট রানওয়েকে ১০ হাজার ৭০০ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত করে প্রশস্ত উড়োজাহাজ স্থাপনের জন্য সম্প্রসারিত করছে, ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে এবং ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
দেশের নতুন আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হিসেবে কক্সবাজার বিমানবন্দর শুধু পর্যটনে নয়, আঞ্চলিক উন্নয়নেও রাখবে বড় ভূমিকা। এখন শুধু অপেক্ষা প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের উড্ডয়নের।
]]>
১ সপ্তাহে আগে
৫







Bengali (BD) ·
English (US) ·