কোনো ইংলিশ ক্লাবকে কোচিং করাবেন না ক্লপ, তবে...

১ সপ্তাহে আগে
এক সময়ের প্রবল পরাক্রমশালী লিভারপুল তখন ধুঁকছিল। ইয়ুর্গেন ক্লপ এমন এক সময়ে অলরেডদের কোচ হয়ে আসেন। এরপর তো ইতিহাস। লিভারপুলকে পুনরায় ইউরোপসেরা বানালেন। প্রিমিয়ার লিগ যুগে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের চ্যাম্পিয়নও বানালেন। সম্ভাব্য সবকিছু জিতিয়ে এক মৌসুম আগে লিভারপুল ছেড়ে গেছেন ক্লপ। এরপর স্লটের নেতৃত্বে গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা পুনরুদ্ধার করলেও চলতি মৌসুমে খেই হারিয়েছে অলরেডরা।

হঠাৎ পথ হারিয়েছে লিভারপুল। চলতি মৌসুমে লিগে টানা হ্যাটট্রিক হারে নেমে গেছে পয়েন্ট টেবিলের তিনে। দলের এমন বেহাল দশায় পুরনো কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে স্মরণ করছেন অলরেড সমর্থকরা। এমন সময়েই ইঙ্গিতটা দিলেন স্বয়ং ক্লপ। আবারও লিভারপুলের কোচ হয়ে ফিরতে পারেন তিনি। এই জার্মান কোচ স্বীকার করেছেন, 'এটা সম্ভব।'


তবে, এই মুহূর্তে ক্লপ কোচিং পেশাটাকে মিস করছেন না। কারণ তিনি এখন রেড বুলের ফুটবল কাঠামোয় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন, তবুও ভবিষ্যতে একদিন অ্যানফিল্ডে ফিরে আসার সম্ভাবনা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেননি তিনি।


২০২৪ সালের গ্রীষ্মে লিভারপুল ম্যানেজার হিসেবে দীর্ঘ নয় বছরের অধ্যায় শেষ করেন ক্লপ। তার হাত ধরেই লিভারপুল ঘরোয়া ও ইউরোপীয় ফুটবলে শিরোপা জয়ের ধারায় ফিরেছিল। ৫৮ বছর বয়সী ক্লপ দায়িত্ব ছাড়ার সময় জানিয়েছিলেন, মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তিই ছিল তার পদত্যাগের প্রধান কারণ।

দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কোচিং পেশা থেকে দূরে এবং রেড বুলের গ্লোবাল হেড অব সকার হিসেবে কাজ করে আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন। এই পদে থেকে তিনি ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছেন। আপাতত তিনি আর কোনো নতুন কোচিং দায়িত্ব নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন না।


আরও পড়ুন: গ্রাহাম পটারকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দিলো সুইডেন


ক্লপ জানিয়েছেন, এখন আর তিনি প্রতিদিনের কোচিংয়ের সেই চাপ অনুভব করেন না। মাইনৎস, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ও লিভারপুলে কাজ করার সময় ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা তাকে সবটুকু শক্তি ঢেলে দিতে বাধ্য করেছিল।


তবে, ভবিষ্যতে ক্লপ আবার কোচিংয়ে ফেরার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। তিনি জানান, ভবিষ্যতে কোনো ইংলিশ ক্লাবের কোচ হবেন না, কারণ লিভারপুলের সঙ্গে তার আবেগ ও পেশাগত সম্পর্ক এত গভীর যে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো ক্লাবে যাওয়া অসম্ভব। তবে লিভারপুলে ফিরে আসা—'তাত্ত্বিকভাবে' অসম্ভব নয়।


‘ডায়েরি অব আ সিইও’ পডকাস্টে ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ক্লপ বলেন, 'আমি বলেছি আমি আর কখনও ইংল্যান্ডে কোনো দলকে কোচিং করাব না। তবে যদি সেটা লিভারপুল হয়, তাহলে তাত্ত্বিকভাবে সেটা সম্ভব। আমি এখন জানি না। আমি যা করছি, সেটা ভালোবাসি। আমি কোচিং মিস করি না—আমি এখনো কোচিং করি, কিন্তু অন্যভাবে।'


'আমি বৃষ্টির মধ্যে দুই-তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকাকে মিস করি না, সপ্তাহে তিনটা প্রেস কনফারেন্স বা বারোটা সাক্ষাৎকার দেয়াকে মিস করি না। আমি ড্রেসিংরুমও মিস করি না—আমি প্রায় ১,০৮০টি ম্যাচে কোচিং করেছি, যথেষ্ট হয়েছে। আমি ড্রেসিংরুমে মরতে চাই না, কারণ ওটা সুন্দর জায়গা নয়, ওখানে গন্ধ থাকে। হয়তো ভবিষ্যতে কিছু একটা হবে, আমার এখন ৫৮, কয়েক বছর পর নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এখনই আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে না যে আমি আর কোচিং করাব না—ভবিষ্যতে যা হবে দেখা যাবে। এখন আমি এমন একটি প্রজেক্টে আছি যেটা আমি ভালোবাসি এবং শতভাগ মনোযোগ দিয়ে করছি।'


২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে 'দ্য অ্যাথলেটিক'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্লপ বলেছিলেন, 'আমি এখন যা ভাবি, তাতে মনে হয় আমি আর কোচিংয়ে ফিরব না। কিন্তু কেউ জানে না ভবিষ্যতে কী হবে। আমার ৫৮—যদি ৬৫ বছর বয়সে আবার শুরু করি, সবাই বলবে, "তুমি তো বলেছিলে আর করবে না!" তখন বলব, "দুঃখিত, তখন আমি শতভাগ ভেবেছিলাম!" এখন এটাই মনে হয়। আমি কিছুই মিস করছি না।'


তিনি আরও বলেন, 'আমি জীবনে কিছুই মিস করিনি কারণ আমি সময় পাইনি ভেবে দেখার। প্রায় ২৫ বছরে আমি মাত্র দুটো বিয়েতে গিয়েছি—একটা আমার নিজের, আরেকটা দু’মাস আগে। এই ২৫ বছরে মাত্র চারবার সিনেমা দেখতে গেছি—সবই গত আট সপ্তাহে! এখন এটা করতে পারা দারুণ লাগছে। এত দেশ ঘুরেছি কোচ হিসেবে, কিন্তু কিছুই দেখিনি—শুধু হোটেল, স্টেডিয়াম, ট্রেনিং গ্রাউন্ড। আগে মিস করিনি, কিন্তু এখন করতে চাই।'


আরও পড়ুন: মরক্কোর কাছে শিরোপা হারানো উত্তরসূরিদের যে বার্তা দিলেন মেসি


মজার ছলে ক্লপ বলেন, 'আমি জানি বেশিরভাগ কোচরা কেমনভাবে বাঁচেন—তারা পুরো জীবনটাই কাজের জন্য দেন। এইভাবে না দিলে সফল হওয়া যায় না। আমি পেপ'কে (গার্দিওলা) বলেছিলাম—ও বয়স বাড়ার সঙ্গে গলফে নিজের প্রতিবন্ধকতা কমিয়েছে! আমি তো এক মিনিটও পাইনি গলফ খেলার! তাই ও প্রতিভা, আমি নই। আমি ভাবি, কখন গলফ খেলো তুমি!'


বর্তমানে অ্যানফিল্ডে ক্লপের ফেরার কোনো সুযোগ নেই, কারণ তার উত্তরসূরি আর্নে স্লট গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছেন। যদিও এখন লিভারপুল সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা চার ম্যাচে হেরেছে, তবুও ক্লাবের ব্যয়বহুল গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফারের পর সবাই আশা করছে—নতুন খেলোয়াড়রা সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে নিলে দল আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন