বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (১৫ অক্টোবর) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম ১ দশমিক ৬ ডলার বেড়ে প্রতি আউন্স ৪ হাজার ২০৯ দশমিক ৪৯ ডলারে পৌঁছেছে; যা সেশনের শুরুতে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২১৭ দশমিক ৯৫ ডলার স্পর্শ করেছিল। আর ডিসেম্বরে ডেলিভারির জন্য মার্কিন স্বর্ণের ফিউচার ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ২২৭ দশমিক ৬০ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়ে দেশের বাজারেও। সবশেষ গত ১৪ অক্টোবর রাতে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেদিন ভরিতে ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়িয়েছে সংগঠনটি। নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা। যা দেশের ইতিহাসে এক ভরি মূল্যবান এই ধাতুর সর্বোচ্চ দাম। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ লাখ ৬ হাজার ৪৯৯ টাকা ও ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১ টাকায়। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫১ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে নতুন করে দাম বাড়ায় যেকোনো সময় আবারও দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো হতে পারে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো হঠাৎ কী এমন হলো যে, ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে শুরু করে ট্রেজারি বন্ডের মতো লাভজনক বিনিয়োগের জায়গা থাকতেও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে প্রাচীন বিনিয়োগ মাধ্যম স্বর্ণ?
‘নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র অর্থনীতিবিদ বব ট্রায়েস্ট বলছেন, ‘স্বর্ণ হচ্ছে প্রচলিত ও ঐতিহ্যবাহী নিরাপদ বিনিয়োগের অন্যতম মাধ্যম। অর্থনীতির সঙ্গে এর মূল সম্পর্ক হলো, যখন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ে তখন স্বর্ণের দামও বেড়ে যায়।’
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে জেনেবুঝে বিনিয়োগের পরামর্শ
বিশ্বে এ অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়েছে বেশ কয়েকটি কারণে—
ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, মার্কিন সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্তিশালী ক্রয়, ডি-ডলারাইজেশন প্রবণতা এবং শক্তিশালী এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড প্রবাহ অন্যতম কারণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে গাজা সংঘাত পর্যন্ত চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে তাই স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সরকারী অচলাবস্থা, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ফ্রান্স ও জাপানের রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাজারে প্রভাব ফেলছে।
সেখানে আবার বড় প্রভাব ফেলছে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয়। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর ১ হাজার টনের বেশি স্বর্ণ কিনেছে। অথচ ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই পরিমাণ ছিল গড়ে ৪৮১ টন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর স্বর্ণ কেনার তালিকায় শীর্ষে ছিল পোল্যান্ড, তুরস্ক, ভারত, আজারবাইজান ও চীন।
ট্রায়েস্ট বলছেন, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ কেনা বাড়াচ্ছে, যাতে তারা ঝুঁকি এড়ানোর জন্য মার্কিন ডলারের মজুদ কিছুটা কমিয়ে নিজেদের রিজার্ভে বৈচিত্র্য আনতে পারে।
আরও পড়ুন: আগামী বছর স্বর্ণ ৫ হাজার ও রুপা ৬৫ ডলারে পৌঁছাতে পারে
বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়েই। তাতে যোগ হয় আরও কয়েকটি কারণ। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। ২০২১ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৪৩ শতাংশ কমেছে। এছাড়া চাহিদার তুলনায় দেশে জোগানের ঘাটতিও অন্যতম কারণ। দেশে আসা স্বর্ণের একটি বড় অংশ ভারতে পাচার হয়ে যায় বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও হয়েছে সম্প্রতি। এই ভারসাম্যহীনতার কারণে দেশের বাজারে সব সময়ই স্বর্ণের জোগানে সংকট থাকে। এই অবস্থায় সামনে শীতে বিয়ের মৌসুমে স্বর্ণের চাহিদা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে পরিস্থিতি যে পর্যায়ে ঠেকছে তাতে আরও বাড়তে পারে স্বর্ণের দাম। বিশ্ববাজারে সেটি পাঁচ হাজার ডলারেও পৌঁছাতে পারে। এমন পূর্বাভাস দিয়ে অ্যাক্টিভট্রেডস বিশ্লেষক রিকার্ডো ইভাঞ্জেলিস্টা বলেন, ‘মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়া, ফেড কর্মকর্তাদের বিভ্রান্তিকর মন্তব্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে স্বর্ণের দাম আরও বাড়বে। মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদে ৫ হাজার ডলারের স্তরে পৌঁছানো অসম্ভব নয়।’
]]>
১ সপ্তাহে আগে
৫







Bengali (BD) ·
English (US) ·