এ বিষয়ে শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক রাকিবুল ইসলাম থানায় এক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
থানায় করা জিডি, স্থানীয় ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৩ জুন গড়াই নদী ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নদী ড্রেজিং করে ৬ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার বালু বিক্রয় করে অপসারণের দরপত্র আহ্বান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে পাঁচ কোটি ১৭ লাখ টাকায় ইজারা পায় কয়ার মেসার্স প্রিয়াংকা ব্রিকস। প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা জমা দেয়া শর্তে ইজারাদার বালু বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হলে ১২ সেপ্টেম্বর বালু বিক্রি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেন এবং বালু অপসারণ কাজ বন্ধ করে দেন।
আরও পড়ুন: কালিগঙ্গায় ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু লুট, নিরব প্রশাসন
এরপর স্থানীয় প্রভাবশালীদের হুমকি ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঠিকাদার এসকেবেটর, পেলোডার, ড্রাম ট্রাক নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। আর ঠিকাদারের অনুপস্থিতিতে রায়ডাঙ্গা মৌজায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা ড্রেজার বসিয়ে বালু লুট শুরু করেন।
আরও জানা গেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ ঘনমিটার বালু লুট করে কয়া ইউনিয়নের রায়াডাঙ্গা ইদগাহ, রায়ভাগা গোরস্থানে এবং বাণিজ্যিকভাবে অন্যত্র বিক্রি করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। যার বাজার মূল্য ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কয়ার রায়ডাঙ্গা গোরস্তানের পিছন দিকে অবস্থিত গড়াই নদী। সেখানে নদীতে বসানো রয়েছে দুটি অবৈধ ড্রেজার। পাইপের সাহায্যে বালু ফেলা হচ্ছে গোরস্তান সংলগ্ন সৌদি প্রবাসী সাইদুল ইসলামের আমবাগানে। ভরাট করা হয়েছে রায়ডাঙ্গা ঈদগাহ মাঠ।
আরও পড়ুন: ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে পিরোজপুরে মানববন্ধন
এ সময় ড্রেজার পরিচালনাকারী স্থানীয় হাসেম আলী বলেন, ‘মাসখানেক হল নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছি। এতদিন ঈদগাহ ও গোরস্তানে দিছিলাম। প্রতি ফিট ৪ টাকা দরে দুদিন ধরে সাইদুলের আমবাগানে দেয়া হচ্ছে।’
তার ভাষ্য, গেল একমাসে তিনি প্রায় ২৫ হাজার ঘনমিটার বালু বিক্রি করেছেন।
এ বিষয়ে কয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মাসুদ রানা বলেন, ‘এতদিন আমরা বালু তোলার বিরোধিতা করেছি। কিন্তু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বালু তোলা হচ্ছে।’
প্রিয়াংকা ব্রিকসের ব্যবস্থাপক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় প্রভাবশালীরা ব্যক্তিগত সুবিধা না পেয়ে ১২ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন করে বালু বিক্রি বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু তারাই এখন ইজারা দেয়া বালু লুট করে বিক্রি করছেন। এতদিনে প্রায় দেড় লাখ ঘনমিটার বালু লুট করেছেন প্রভাবশালীরা; যার বাজার মূল্য ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা। তবে তিনি কোনো প্রভাবশালীর নাম প্রকাশ করেননি।’
আরও পড়ুন: কোম্পানীগঞ্জে নদী থেকে ৭টি বাল্কহেড ও ৯টি ড্রেজার মেশিন জব্দ, আটক ১৮
বালুর ঘটনায় লিখিত জিডির কথা স্বীকার করেছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকর জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘বালু ইজারা দিয়েছে পাউবো। বালু লুটের ঘটনায় একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’