কক্সবাজারে স্টেডিয়ামে তাণ্ডবের ঘটনায় ২টি তদন্ত কমিটি গঠন

৩ সপ্তাহ আগে
কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে ধারণক্ষমতা ৭ হাজার হলেও বিক্রি হয়েছে তার ছয় গুণের বেশি টিকিট। ডিসি গোল্ডকাপ ফুটবলের ফাইনালে শুক্রবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেল কক্সবাজার। তবে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ এর জন্য ইজারাদার ও টিকিট কালোবাজারিদের দায়ী করেছেন। জেলা প্রশাসক শনিবার পরিদর্শন শেষে তদন্ত কমিটি গঠন ও আইনগত পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামের চারদিকে ধ্বংসযজ্ঞ। স্টেডিয়ামের বাইরে যেমন ভাঙচুরের দৃশ্য দৃশ্যমান, তার চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা স্টেডিয়াম ভবনের ভেতর ও ভিআইপি গ্যালারির। ভাঙচুরের পাশাপাশি প্রতিটি কক্ষ থেকে লুটপাট করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম।


স্টেডিয়ামের মাঠের অবস্থা আরও ভয়াবহ। গ্যালারির নিরাপত্তা বেষ্টনী যেমন ভাঙচুর করা হয়েছে, তেমনি ভাঙচুর থেকে রক্ষা পায়নি গোল পোস্টও। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে স্টেডিয়ামের একটি অংশ। স্টেডিয়ামের ধ্বংসযজ্ঞ পুরো চিত্র এখন দৃশ্যমান। তবে এমন তাণ্ডবের ঘটনার জন্য ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি এবং ইজারাদারদেরকে দায়ী করছেন স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ।


কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি হয়েছে যা প্রমাণও পাওয়া গেছে। টিকিট কালোবাজারি হয়েছে এটাও নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ইজারাদাররা তাণ্ডব ঘটনায় থানা এজাহার দিচ্ছে না, এর আগেও টিকিট কালোবাজারি ধরেও এজাহার দেয়নি। তার মানে বুঝা যায় তারাও জড়িত রয়েছে। তারা যদি জড়িত না থাকতো তাহলে তো এজাহার জমা দিত। কারণ এটার পুরো দায় ইজারাদারদের। টিকিট বিক্রির পুরো দায়িত্ব তাদের। তারা ব্যর্থ হয়েছে এবং ঘটনার জন্য তারাও দায়ী।


তবে ইজারাদারদের একজন ইব্রাহীম বাবু দাবি-তারা নন, টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে না পারায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।


এদিকে কক্সবাজারে ‘জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট-২০২৫’-এর ফাইনাল খেলায় টিকেট কেটে ঢুকতে না পারার অভিযোগে উত্তেজিত দর্শকদের কর্তৃক স্টেডিয়ামের বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুরের পাশাপাশি তান্ডব চালানোর ঘটনায় দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন।


শনিবার দুপুরে কক্সবাজারের ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম’ পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।


এর আগে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন শাহীন সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্টেডিয়াম ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করেন। পরে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বলেন।


এ সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিকালে স্টেডিয়ামে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। উত্তেজিত দর্শকরা ভাঙচুরের পাশাপাশি যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা তদন্তে প্রশাসন দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন শাহীন বলেন, ঘটনায় জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা স্টেডিয়াম ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত থানায় কোন ধরণের লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে মামলা নথিভুক্ত করা হবে।


আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ফুটবল স্টেডিয়ামে দর্শকদের তাণ্ডব, ইউএনওসহ আহত ২০


ধারণ ক্ষমতার বেশী দর্শক স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেছিল এবং অনেকে টিকেট সংগ্রহ করেও ভিতরে ঢুকতে না পারায় দর্শকরা উত্তেজিত হয়ে এই তাণ্ডব চালিয়েছে বলে মন্তব্য করে জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার সময় অন্তত ৫০ হাজারের মত দর্শক স্টেডিয়ামের ভিতরে ছিল। এসময় টিকেট কেটে অসংখ্য দর্শকও ঢুকার জন্য স্টেডিয়ামের বাইরে অপেক্ষা করছিল।


তবে সমবেত দর্শকদের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা অপ্রতুল ছিল জানিয়ে সাইফউদ্দীন শাহীন জানান, পুলিশ সহ বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। যাতে বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়।


কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার ছিল শুক্রবার। রামু ও টেকনাফ উপজেলা একাদশের মধ্যে বেলা ৩ টায় ফাইনাল ম্যাচটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৭ টা থেকে স্টেডিয়ামে গিয়ে টিকেট সংগ্রহ শুরু করেছে দর্শকরা। এই টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও দর্শকের উপস্থিত দেখে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। দুপুরে ২ টা পর্যন্ত আয়োজক কমিটির অতিরিক্ত মূল্যে ধারণ ক্ষমতার ৬ গুণ টিকেট বিক্রি করে দেয়।


এতে অসংখ্য দর্শক টিকেট কেটে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে না পারায় উত্তেজিত হয়ে উঠে। অতিরিক্ত দর্শক গ্যালোরিতে বসার স্থান না পেয়ে গেইট ভেঙে আড়াই টার দিকে দর্শক পুরো মাঠ দখল করে নেন। এতে কারণে মাঠে খেলা পরিচালনার সুযোগ না হওয়ায় আয়োজক সহ পুলিশ ও র‍্যাবসহ সেনা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু দফায় দফায় চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।


এর মধ্যে স্টেডিয়ামে প্রবেশে ব্যর্থ দর্শকরা স্টেডিয়ামের বাইর থেকে ভবনে ভাঙচুর শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এর মধ্যে বিকাল ৫ টা ১৫ মিনিটের দেখা মাঠ থাকা দর্শকদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী লাঠি চার্জ করে বের করে দিতে সক্ষম হয়। এরপর মাঠে খেলা পরিচালনার প্রস্তুতি নিলেও গ্যালোরিতে দর্শক ও বাইরের দর্শকরা এক যোগে হামলা করে গ্যালোরি, মাঠ, প্রেস বক্স সহ সব কিছু ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন, পুলিশের ৩ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ফাইনাল খেলা স্থগিত ঘোষণা করে আয়োজক কমিটি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন