মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এতে অংশ নেয় সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়া পাড়ার কয়েক হাজার মানুষ। এসময় পুরো শহরে অচলাবস্থা তৈরি হয়। পরে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অবরোধ তুলে নেয় তারা। এরপরই স্বাভাবিক হয় যানবাহন চলাচল।
আন্দোলনকারীরা অংশগ্রহণকারীরা জানান, তাঁরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বসতভিটা হারিয়ে জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়াসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা থেকে এসে কক্সবাজার শহরে বাস করছেন। কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের খাসজমিতে বসতভিটা হারানো প্রায় ৫০ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তুর বসবাস। ছয় হাজার একর জমিতে ১০ হাজারের বেশি পাকা ও আধা পাকা ঘর করে তাঁরা রয়েছেন। ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে গড়ে ওঠা এসব বসতিকে ঘিরে মসজিদ-মাদ্রাসা যেমন হয়েছে, তেমনি গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকিমহাল। অথচ এখন জলবায়ু উদ্বাস্তুদের স্থায়ী পুনর্বাসন না করে সরকারি এই খাসজমি থেকে উচ্ছেদের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা আরও জানান, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কথা বলে তাদেরকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু তারা তাদের বসতভিটা ছাড়তে চায় না। সরকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে শহর অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামাল, পূর্ব কুতুবদিয়াপাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি নুরুদ্দিন খান, মধ্যম কুতুবদিয়াপাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি আবুল বশর, ফদনারডেইল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা জাহেদুর রহমান, ব্যবসায়ী ছাবের আহমদ, আইনজীবী জাহেদুল ইসলাম, শিক্ষক এজাবত উল্লাহ প্রমুখ।
সমাবেশে এ ছাড়া সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল, সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী ও জিসান উদ্দিন, জেলা যুবদলের সভাপতি ছৈয়দ আহমদ উজ্জল, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে সওজের জমিতে উচ্ছেদ অভিযানকে ঘিরে উত্তেজনা, বুলডোজার ভাঙচুর
এদিকে আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে সমাবেশস্থলে আসেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দীন। এসময় জেলা প্রশাসক বলেছেন, আন্দোলনকারীদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপিটি দ্রুততার সাথে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত বিমানবন্দরের জন্য সম্প্রসারিত এলাকায় উন্নয়নকাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশনার পাশাপাশি উচ্ছেদ পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আর আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্প্রসারণের জন্য উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা হয় কয়েক বছর আগে। তাদেরকে পুনর্বাসন করার জন্য সরকার খুরুশকুলে আশ্রয়ণ প্রকল্পও চালু করেছে। ইতোমধ্যে কয়েক শ পরিবারকে ফ্ল্যাটও দেওয়া হয়েছে বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে। পর্যায়ক্রমে চার হাজারেরও বেশি পরিবার ফ্ল্যাট পাওয়ার কথা রয়েছে।