এক দিনেই সাড়ে তিনশ রান তুললো ইংল্যান্ড, ভারতকে হারালো ৫ উইকেটে

২ সপ্তাহ আগে
বাজবল ক্রিকেট কাকে বলে, সেটিই দেখিয়ে দিলো ইংল্যান্ড। হেডিংলির মাঠে এক দিনে প্রয়োজন সাড়ে তিনশ রান, সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়ে দিলেন রুট-ডাকেটরা। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ দিনে ইংলিশদের জিততে হলে করতে হবে ৩৫০ রান, হাতে ছিল ১০ উইকেট। সেই রান তাড়া করতে নেমে ভারতকে ৫ উইকেটে হারালো ইংল্যান্ড।

একেই বুঝি বলে বাজবল ক্রিকেট। বুমরাহ, সিরাজ, শার্দুল ঠাকুর; কেউ-ই পারলেন না ইংলিশদের সবগুলো উইকেট তুলে নিতে। অথচ সারাটা দিন তারা বোলিং করলেন। শেষ দিনে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য দরকার ছিল সাড়ে তিনশ রান, সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ইংলিশদের। 

 

চতুর্থ দিনের শেষ বেলায় ভারত অলআউট হয় ৩৬৪ রানে। আর তাতেই ইংল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৭১ রানের। শেষ সেশনে অবশ্য ইংলিশরা ব্যাট করার সুযোগ পায় মাত্র ৬ ওভার। কোনো উইকেট না হারিয়ে ২১ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করে স্বাগতিকরা। আর তাতেই শেষ দিনে তাদের জয়ের জন্য দরকার হয় ৩৫০ রান। 

 

পঞ্চম ও শেষ দিনে ব্যাটিং শুরু করেন জ্যাক ক্রাউলি ও বেন ডাকেট। দুজনে বেশ দেখেশুনেই খেলতে থাকেন। উদ্বোধনী জুটিতে তারা দুজনে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ১৮৮ রান। অবশেষে উইকেটের দেখা পায় ভারত। ১২৬ বলে ৬৫ রান করা ক্রাউলিকে রাহুলের ক্যাচ বানান প্রসিধ। 

 

এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন বেন ডাকেট। এক পর্যায়ে তিনি তুলে নেন সেঞ্চুরি। এর মাঝে অবশ্য ওলি পোপ আউট হয়েছেন ৮ বলে ৮ রান করে। প্রসিধ-এর বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন এই ব্যাটার। এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ডাকেট। ১৪৯ রান করে ঠাকুরের বলে এক্সট্রা কাভারে নিতিশ রেড্ডির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ওপেনার। পরের বলেই ফেরেন হ্যারি ব্রুক। পন্ত-এর হাতে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফেরেন আগের ম্যাচে ৯৯ করা এই ব্যাটার। 

 

১৫ বছর পর প্রথম কোনো ইংলিশ ওপেনার হিসেবে টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন ডাকেট। এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন। ভারতের বিপক্ষে বড় লক্ষ্য তাড়ায় ওপেনারদের ব্যাটে এমন ইনিংসই প্রয়োজন ছিল ইংলিশদের। এ নিয়ে ৩৪তম টেস্টে ডাকেট নিজের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি করলেন, যা ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয়। 

 

আরও পড়ুন: লর্ডসে এক দিনে সবচেয়ে বেশি শিশুকে ক্রিকেট শিখিয়ে বিশ্ব রেকর্ড

 

ডাকেট আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন সতীর্থ ওপেনার জ্যাক ক্রাউলির সঙ্গে মিলে। দুই ওপেনারের জুটিতে ইংল্যান্ড পেয়েছে ১৮৮ রান। যার মাধ্যমে ভেঙেছে ৪৮ বছরের পুরোনো এক রেকর্ড। ১৯৭৭ সালে নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ইংলিশ ওপেনার জিওফ্রি বয়কট ও মাইক ব্রেয়ারলি মিলে গড়েন ১৫৪ রানের জুটি। যা চতুর্থ ইনিংসে এতদিন ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ জুটি ছিল। সেটিকে আজ ছাড়িয়ে গেলেন ডাকেট-ক্রাউলি জুটি। 

 

পঞ্চম উইকেট জুটিতে জো রুটকে নিয়ে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। ক্রিজে থিতু হয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে দেন ইংলিশ অধিনায়ক। জাদেজার বলে রিভার্স সুইফ করতে গিয়ে গিলের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৫১ বলে ৩৩ রানেই ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। 

 

এরপর আর কোনো অঘটন ঘটতে দেননি জো রুট ও জেমি স্মিথ। দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন এই দুই ব্যাটার। রুট ৫৩ আর স্মিথ ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।  

 

এর আগে প্রথম ইনিংসে দাপট দেখিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটাররা। সেই ইনিংসে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ভারতের তিনজন ব্যাটার- যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমান গিল ও রিশভ পন্ত। এ ছাড়া কেএল রাহুল করেছেন ৪২ ও রবীন্দ্র জাদেজা করেছেন ১১ রান। তা ছাড়া আর কোনো ব্যাটার ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘর। 

 

তিন সেঞ্চুরিতে বিশাল সংগ্রহ পায় সফরকারীরা। ৪৭১ রানে অলআউট হয় তারা। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য জবাবটা ভালোভাবেই দিয়েছে ইংল্যান্ড। এই ইনিংসে তাদের একজন ব্যাটার পেয়েছিলেন সেঞ্চুরির দেখা। ওলি পোপ করেছেন ১০৬ রান। 

 

এ ছাড়া হ্যারি ব্রুক আউট হয়েছেন নার্ভাস নাইন্টিনাইনে। বেন ডাকেট করেন ৬২ রান। বুমরাহ’র বলে সরাসরি বোল্ড আউট ফেরেন এই ব্যাটার। জো রুট ফিরেছেন দ্রুতই। ৫৮ বলে ২৮ রান করা এই ব্যাটারকে শিকার করেন বুমরাহ। 

 

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাথিউসের বদলি হতে যাচ্ছেন কে?

 

অধিনায়ক বেন স্টোকস অবশ্য নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ৫২ বলে ২০ করা বাঁহাতি এই ব্যাটার আউট হন সিরাজের বলে পন্ত-এর হাতে ক্যাচ দিয়ে। জেমি স্মিথ অবশ্য দলের হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন। ৫২ বলে খেলেন ৪০ রানের ইনিংস। প্রসিদ্ধ’র বলে সুদর্শনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ব্যাটার।  

 

এরপর ব্রাইডন কার্স ২৩ বলে ২২ ও টং করেন ১৮ বলে ১১ রান। প্রথম ইনিংসে ৪৬৫ রানে অলআউট হয় স্বাগতিক ইংল্যান্ড। আর তাতেই ৬ রানের লিড পায় সফরকারী ভারত। এই ইনিংসে ভারতের হয়ে ফাইফার নিয়েছেন জসপ্রীত বুমরাহ। 

 

৬ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং শুরু করে ভারত। এই ইনিংসেও ভারতের দুজন ব্যাটার পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা। আগের ইনিংসে ৪২ রান করা কেএল রাহুল এ ম্যাচে পেয়েছেন শতকের দেখা। ২৪৭ বলে ১৩৭ রান করে আউট হন ডানহাতি এই ব্যাটার। 

 

আগের ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়া রিশভ পন্ত এই ইনিংসেও পেয়েছেন সেঞ্চুরি। ১৪০ বলে ১১৮ রান করে আউট হন বাঁহাতি এই ব্যাটার। দলীয় ১৬ রানেই জয়সওয়ালের উইকেট হারায় ভারত। সাই সুদর্শন আউট হন ৪৮ বলে ৩০ রান করে। আগের ইনিংসে সেঞ্চুরি করা শুভমান গিল এই ইনিংসে আউট হন মাত্র ৮ রান করে। 

 

করুন নায়ার ৫৪ বলে ২০ ও রবীন্দ্র জাদেজা করেন ৪০ বলে ২৫ রান। এ ছাড়া ঠাকুর করেন ১২ বলে ৪ রান। পরের তিনজন ব্যাটার সিরাজ, বুমরাহ ও প্রসিদ্ধ আউট হন কোনো রান না করেই। আর তাতেই চতুর্থ দিন শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে ৩৬৪ রানে অলআউট হয় ভারত। আর ইংলিশদের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৭১ রানের। 

 

দুই ইনিংস মিলিয়ে ইংল্যান্ডের হয়ে ৬ উইকেট শিকার করেন ব্রাইডন কার্স। স্টোকস ৫টি ও শিকার করেন টং ৭ উইকেট। এ ছাড়া বশির নেন ৩ উইকেট।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন