তৃতীয় দিনের মতো আজও চলছে এই কাজ। তবে এর ফলে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, ভোগান্তিতে পড়েছেন চালক ও যাত্রীরা।
আট বছরেও শেষ হয়নি ১২ কিলোমিটারের কাজ
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার চারলেন প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড কাজটি হাতে নেয়।
তবে করোনা মহামারী, বালু সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কাজ বারবার পিছিয়ে যায়। প্যাকেজ–১-এর আওতায় আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশের এক পাশ নির্মাণেই কেটে গেছে পুরো আট বছর। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৫ সালের জুনে, এরপরও নতুন জটিলতায় থেমে যায় কাজ।
এই সময়ের মধ্যে বর্ষায় সড়কের দুই পাশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কিন্তু উপদেষ্টার আগমনকে কেন্দ্র করে হঠাৎই দুই কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় অস্থায়ী সংস্কার।
আরও পড়ুন: উপদেষ্টার আগমনকে ঘিরে অস্থায়ী সংস্কার, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজট
দেখানোর কাজ, স্থায়ী নয়
বিশ্বরোড গোলচত্বরে দেখা যায়, মূল মহাসড়কে ১৫ ইঞ্চি উঁচু করে ইট বিছানো হচ্ছে, যাতে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দিনভর ভোগান্তিতে পড়ছেন হাজারো মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজোয়ান মাহমুদ বলেন,
রাষ্ট্রীয় অতিথি আসবে বলে হঠাৎ কাজ শুরু হয়েছে। আমরা এমন কাজ চাই না, আমরা চাই স্থায়ী সমাধান। অতিথি চলে গেলে এই ইটগুলো আবার তুলে ফেলা হবে। এতে জনগণের কষ্ট যেমন বাড়বে, তেমনি রাষ্ট্রের টাকাও অপচয় হবে।
হানিফ পরিবহনের চালক মো. শাহজাহান বলেন, ‘বিশ্বরোডের কথা মনে হলে মাথায় বাজ পড়ে। আমরা চাই, বারবার নয় একবারেই ভালোভাবে রাস্তা মেরামত করা হোক।’
আরও পড়ুন: ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে পদে পদে ভোগান্তি
প্রশাসন বলছে “অস্থায়ী”, স্থানীয়রা বলছে “অপচয়”
খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘যানজট নিরসনে দিনরাত কাজ করছি। কিন্তু সমস্যা বেড়েই চলেছে। স্থায়ী মেরামত হলে তবেই সমাধান হবে।’
প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, ‘এটি সাময়িক জনদুর্ভোগ এড়ানোর জন্য অস্থায়ী সংস্কার। দুই-তিন দিনের মধ্যেই চলাচল স্বাভাবিক হবে। এরপর স্থায়ী কাজ শুরু হলে বর্তমান অংশ সরিয়ে নেয়া হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকল্প কর্মকর্তা জানান, উপদেষ্টা আসাকে কেন্দ্র করেই এই সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে এবং দ্রুত সময়ে স্থায়ী কাজ শুরু হলে এগুলো সরিয়ে নেয়া হবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সওজ-এর এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন,
এই অস্থায়ী সংস্কারেই দুই কোটিরও বেশি টাকা খরচ হবে। প্রকল্প ও সওজ যৌথভাবে কাজটি করছে। স্থায়ী কাজ শুরু হলে এই ইট-বালু সরিয়ে ফেলা হবে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে চার বিভাগের ২১ জেলার প্রায় ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে।
এত গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অস্থায়ী সংস্কার জনদুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলে মনে করছেন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা।
]]>