ইসলামে ক্ষমাহীন যে গুনাহ

৩ সপ্তাহ আগে ১০
মানুষ ভুল করে, পাপে লিপ্ত হয়, এটাই মানবজীবনের স্বাভাবিক অংশ। কিন্তু ইসলাম মানুষের জন্য সর্বদা আশা ও ফেরার দরজা খোলা রেখেছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি সীমাহীন দয়ালু। তিনি চান, বান্দা যেন ভুল বুঝে, অনুতপ্ত হয়ে তার দিকে ফিরে আসে। তাই ইসলাম কোনো পাপীকে চিরতরে ধ্বংস বলে ঘোষণা করে না; বরং তওবার মাধ্যমে তাকে নতুন জীবনের সুযোগ দেয়।

তবে একটি পাপ আছে, যা আল্লাহ কখনো ক্ষমা করেন না, যদি কেউ মৃত্যুর আগে তওবা না করে। সেটি হলো শিরক, অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করা। এই পাপ ইসলাম ধর্মে সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য।

 

ইসলামে সব পাপই ক্ষমাযোগ্য, যদি মানুষ আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করে। তবে যে পাপটি ক্ষমা করা হয় না, যদি কেউ মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তা হলো শিরক, আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

 

নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করা ক্ষমা করেন না; তবে এর বাইরে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করা হলো মহা অন্যায়। (সুরা আন-নিসা ৪:৪৮)

 

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক ইসলামি বইমেলা: বিদেশি ৪ প্রতিষ্ঠানসহ অংশ নেবে শতাধিক প্রকাশনী

 

শাইখ মুহাম্মদ আল-মুখতার আশ-শিংকিতি (পরিচালক, ইসলামিক সেন্টার অব সাউথ প্লেইন্স, টেক্সাস) বলেন, আল্লাহ সুরা আয-যুমারে ঘোষণা করেছেন, 

 

বল, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করেন। তিনি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আয-যুমার: ৫৩)

 

রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যতক্ষণ না মানুষের প্রাণ কণ্ঠে পৌঁছে যায়, ততক্ষণ আল্লাহ তাঁর তওবা কবুল করেন। (মুসনাদে আহমদ)

 

তওবার শর্তসমূহ

১. পাপের জন্য গভীর অনুতাপ করা। ২. ভবিষ্যতে আর পাপে না ফেরার দৃঢ় সংকল্প করা। ৩. যদি পাপের সঙ্গে কারো অধিকার জড়িত থাকে, তবে তা ফেরত দেওয়া বা ক্ষমা চাওয়া। যদি কেউ তওবা না করে এবং সেই পাপের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তবে তার বিচার আল্লাহর হাতে। তিনি চাইলে ক্ষমা করবেন, চাইলে শাস্তি দেবেন।

 

কিন্তু যদি কেউ শিরক অবস্থায় মারা যায়অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে শরিক করে তবে সে ক্ষমা পাবে না। আল্লাহ বলেন,

 

নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করা ক্ষমা করেন না; তবে এর বাইরে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। (সুরা আন-নিসা: ৪৮)

 

আল্লাহর অসীম রহমত ধর্ষক, খুনি, এমন ভয়াবহ অপরাধীরাও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত নয়, যদি তারা সত্যিকার তওবা করে এবং উপরোক্ত শর্ত পূরণ করে।

 

ইসলাম প্রতিশ্রুতি দেয়, যারা আন্তরিকভাবে ফিরে আসে, আল্লাহ তাদের পাপ মুছে দেন এবং সেই পাপগুলোকেই সওয়াবের আমলে পরিণত করেন। আল্লাহ বলেন,

 

যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্য গ্রহণ করে না, কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে না, ব্যভিচার করে না, যে এসব করে, সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং সে তাতে চিরস্থায়ীভাবে লাঞ্ছিত থাকবে। তবে যে তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কাজগুলোকে ভালো কাজ দ্বারা পরিবর্তন করে দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা আল-ফুরকান: ৬৮–৭০)

 

আরও পড়ুন: নবীজির প্রিয় স্ত্রী


ইসলামের দৃষ্টিতে, যত বড় অপরাধই হোক না কেন, সত্যিকারের তওবা আল্লাহর কাছে অমূল্য। অনুতপ্ত হৃদয়ে ফিরে আসা একজন পাপীকেও আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দায় পরিণত করেন। কুরআনের ভাষায়, আল্লাহ তাআলা তওবাকারীর মন্দ কাজকেও সওয়াবে পরিণত করে দেন।

 

তাই কখনো হতাশ হওয়া নয়, বরং প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর রহমতের দিকে ফিরে যাওয়া, তার ক্ষমা প্রার্থনা করা, এবং নতুন করে জীবন শুরু করা, এটাই একজন মুমিনের জীবনবোধ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আন্তরিক তওবার তাওফিক দান করুন। আমিন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন