আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে বালু উত্তোলন, ঝুঁকিতে শতকোটি টাকার সেতু

১ সপ্তাহে আগে
রাতভর আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অবৈধভাবে শত শত ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ড্রেজিং করে নদপাড়ে রাখা বালু দিনদুপুরে লুট করছে সিন্ডিকেট। এই দুই কারণে মাদারীপুরের শিবচরে আড়িয়াল খাঁ নদে নির্মিত প্রায় ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি সেতুটি এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

জানা যায়, শিবচরের নয়াবাজার এলাকায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) প্রায় ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করে। এর ফলে দত্তপাড়া, শিরুয়াইল ও নিলখী ইউনিয়নের বাসিন্দারা সরাসরি যাতায়াতের সুবিধা পান এবং সড়কপথে দূরত্ব কমে যায় প্রায় ১২ কিলোমিটার। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এ সেতু ব্যবহার করেন।

 

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সেতু উদ্বোধনের আগেই ড্রেজিং করে শত শত ঘনফুট বালু নদপাড়ে রাখা হয়েছিল। এখন সেই বালু ট্রাকে করে সরিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্র। এতে নদপাড়ে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি সেতুর আশপাশে রাতভর ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে সেতুটি রক্ষায় পাউবোকে চিঠি দিয়েছে এলজিইডি। অন্যদিকে অস্থায়ীভাবে ৫০০ মিটার বাঁধ নির্মাণে ৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জেলা প্রশাসকও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের আশ্বাস দিয়েছেন।

 

আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর প্রায় ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নির্মাণ করে। ছবি: সময় সংবাদ

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, নদপাড়ে রাখা বালু স্থানীয় প্রভাবশালী রাকিব খান শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিন ট্রাকে তুলছেন। শুধু বালুই নয়, সেতুর নিচের মাটিও ট্রাকে ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কারণে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও প্রভাবশালীর ভয়ে সরাসরি কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না।

 

সেতু ব্যবহারকারী দত্তপাড়া-খাড়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মুনসুর ফরাজী বলেন, ‘নদে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতও বেড়েছে। বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন আরও তীব্র হচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

 

আরও পড়ুন: নতুন ভবন, আধুনিক যন্ত্রপাতি— তবুও জনবল সংকটে বিপর্যস্ত মাদারীপুরের স্বাস্থ্যসেবা

 

স্থানীয় বাসিন্দা সুজন মুন্সি বলেন, ‘নদপাড় থেকে প্রতিদিন বালু তোলা হচ্ছে। প্রশাসন অভিযান চালালে কিছুদিন বন্ধ থাকে, পরে আবার শুরু হয়। রাতে সবচেয়ে বেশি ট্রাক চলে।’

 

অভিযোগ প্রসঙ্গে রাকিব খান বলেন, ‘নদপাড়ে রাখা বালু আমার বাবার কেনা। তিনি যমুনা থেকে বালু এনে এখানে রেখেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর নদে ভাঙন দেখা দেয়ায় আমি সেগুলো ট্রাকে করে সরাচ্ছি। সরকারি বালু লুট করার অভিযোগ সঠিক নয়।’

 

এলজিইডির মাদারীপুর নির্বাহী প্রকৌশলী বাদল চন্দ্র কীর্তনীয়া বলেন, ‘সেতু নির্মাণকালে নদে বড় ধরনের ভাঙন বা স্রোত ছিল না, তাই বেরিবাঁধের প্রয়োজন হয়নি। বর্তমানে ঘূর্ণিস্রোত তৈরি হয়েছে, এতে সেতুটি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আমরা পাউবোকে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছি।’

 

আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। ছবি: সময় সংবাদ

 

পাউবোর মাদারীপুর নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান বলেন, ‘ড্রেজিংয়ের পর রাখা বালু প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারি বালু লুটের সুযোগ নেই। সেতুটি রক্ষায় প্রাথমিকভাবে ৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।’

 

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘মাদারীপুরে কোনো বালুমহল নেই। যারা নদ থেকে বালু উত্তোলন করছে তারা অপরাধ করছে। কয়েকজনকে ইতোমধ্যে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। সরকারি বালু লুটকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যায়ের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন