ইসলাম কী বলে: মূল নীতিমালা
১. জীবন অনন্য ও আল্লাহর আয়ত্তে, মানুষের জীবন তার নিজের মালিকানায় নেই; জীবন ও মৃত্যু নির্ধারক কেবল মহান আল্লাহ। ইসলাম মানুষের জীবনের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং জীবনবিমুখ কার্যকলাপ সার্বিকভাবে নিষেধ করে।
২. আত্মহত্যা হারাম, কোরআন ও হাদিসে আত্মহত্যা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। কোরআন সেইসব আয়াতের মাধ্যমে আত্মধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে আদেশ করে এবং নবী সর্বশ্রেষ্ঠ (সা.)-এর অর্জিত হাদিসগুলোও আত্মহত্যার কঠোর নিন্দা ঘোষণা করে। ঐতিহ্যগতভাবে আলেমরা আত্মহত্যাকে এক গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
অনশন-সম্পর্কিত ফিকহী মনোভাব ও সাক্ষ্যসমূহ
একাধিক শরীয়তী গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে অভিযোাগ-দাবি পূরণের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার ছাড়াই মারা যাওয়া আত্মহত্যার একটি রূপ, এবং এটি গুরুতর পাপ হিসেবে গণ্য। প্রখ্যাত মুফাসসির ও ফিকহ পণ্ডিতদের মধ্যে সাধারণ মত হলো, যদি কারো কাছে খাদ্য ছিল বা গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকলে তা ইচ্ছাকৃতভাবে না নিয়ে মৃত্যু বরণ করা পাপ ও আত্মহত্যার স্বরূপ।
আরও পড়ুন: নবীজির প্রিয় ও পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে সিরাতের বই ‘নবীজির প্রিয় ১০০’
আত্মহত্যাকে উদাহরণ দেখিয়ে বলা হয়, যে ব্যক্তি নিজেকে হত্যা করবে তার জন্য শাস্তি রয়েছে; তবে অনেক আলেমের ব্যাখ্যায়, যার পেছনে অনর্থক অমানবিক দুঃশক্তি বা সংকট থেকে অনাহুত দুর্বলতা (শিশু মানসিকতা, চরম মানসিক কষ্ট) কাজ করে—সে সম্পূর্ণভাবে ‘স্থায়ী জাহান্নামি’ হিসেবে স্থগিত নয়; আল্লাহ’র রহমত ও ন্যায় বিচারে পর্যবেক্ষণ থাকবে।
অনশন বনাম ধর্মঘট: কোনগুলো গ্রহণযোগ্য?
সামান্য বা সাময়িক অনশন/ধর্মঘট, যদি উদ্দেশ্য ন্যায্য এবং অনশনের ফলে প্রাণহানি বা গুরুতর ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে, তখন তা শর্তসাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য হিসেবে ধরা যেতে পারে। অর্থাৎ কোনো কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত ও নিরাপদভাবে করা হলে প্রতিবাদ বা ধর্মঘট আয়োজিত হতে পারে।
আমরণ অনশন (জীবনের ঝুঁকি), কোন দাবির জন্য প্রাণহানির আশঙ্কা যুক্ত করে দীর্ঘদিন অনশন চালিয়ে মারা যাওয়া ইসলামী নীতির বিপরীত। এমন অনশনকে ইসলাম অনুমোদন করে না; কারণ এটি নিজের প্রাণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা এবং আত্মহত্যার সঙ্গতিসহ পাপিক কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত হলে করণীয়, অনশনরত ব্যক্তি বা আশপাশের লোকদের উচিত অনশন ভাঙার জন্য তৎকাল ব্যবস্থা করা; জীবন রক্ষা সর্বোচ্চ প্রাধান্য পায়। যদি অনশনরত ব্যক্তি তখনও খাদ্য গ্রহণ না করে এবং মৃত্যু ঘটে, ঐতিহ্যগত ফিকহ অনুযায়ী তা আত্মহত্যার পর্যায়ে গণ্য হতে পারে।
কেন ইসলাম এ বিষয়ে কঠোর?
জীবনের মর্যাদা: জীবনকে আল্লাহ প্রদান করেছেন; তাই নিজে থেকেই জীবনবিমুখ হওয়া ধর্ম-বিরুদ্ধ। দুনিয়া-অসুখ বনাম পরকালের গম্ভীরতা: সাময়িক বা আন্তরিক দাবির জন্য অনুকরণীয় ক্ষতি হলে পরকালে তার গুরুতর বাস্তব শাস্তির সম্ভাবনা বিবেচ্য।
সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব: প্রত্যেক মুসলিমের দায় দায়বদ্ধতার মধ্যে তার নিজ জীবনের রক্ষাও অন্তর্ভুক্ত; নিজের মৃত্যু দিয়ে অন্যদের সতর্ক করা বা চাপ তৈরি করা ইসলামের নৈতিক কাঠামোর বিপরীতে যায়।
আমরণ অনশন, ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়; যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে না খেয়ে মারা যায়, ঐতিহ্যগত ফিকহ অনুযায়ী সেটি আত্মহত্যার ঝুঁকিতে পড়ে এবং গুরুতর দণ্ড-পরিণতি হতে পারে।সাময়িক/সুরক্ষিত অনশন বা ধর্মঘট, যদি প্রাণহানির সম্ভাবনা না থাকে, শর্তসাপেক্ষে অনুমোদনযোগ্য; তবুও শরীয়ত এবং সাধু-আদব মেনে চলা আবশ্যক।
চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তা, অনশন বা আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিলে দ্রুত মানসিক ও চিকিৎসা সহায়তা পাওয়াভাব জরুরি; সম্প্রদায়ের সমর্থন ও পেছনের লোকদের সতর্কতা প্রয়োজন।ধর্মীয় দায়িত্ব, প্রতিটি মুসলিমের উচিত জীবনের মর্যাদা ব্যতীত কোনো কারণে নিজের জীবন ঝুঁকির মধ্যে না ফেলা এবং অন্যদেরও এ বিষয়ে সচেতন করা।
ইসলাম জীবনের মুখ্যত্ব ও পরকালের হিসাব-কিতাবকে চোখে রেখে ভেবে-চিন্তে আচরণে অভ্যস্ত করে। কোনো ন্যায্য দাবির জন্যই হোক, নিজের প্রাণকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা, বিশেষত অনশন করে মৃত্যুবরণ, ইসলামী নীতির সাথে মিলেনা। যদি প্রতিবাদ করতে হয়, তা যেন এমনভাবে করা হয় যা জীবন ও শরীরের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেয়; আর জীবন রক্ষা করাপ্রধান দায়িত্ব হিসেবে, ধর্মীয় ও মানবিক কর্তব্যেই মুখ্য।
]]>
২ সপ্তাহ আগে
৫






Bengali (BD) ·
English (US) ·