অন্তত একজন 'শামসুজ্জোহা' হয়ে মরে যাওয়া অনেক বেশি আনন্দের, সম্মান আর গর্বের। দেশের মালিক জনগণ, কাজেই জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিন। সরকার যা চাইবে তা হতে পারে না। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে হামলা কেন? জবাব চাই, জবাব চাই। বাঁচলে বাঁচার মত বাঁচবো। কারো রক্তচক্ষুর ভয়ে, ন্যায়কে ন্যায়, আর অন্যায়কে অন্যায় বলতে পিছুপা হবো না। শাসকের বিরুদ্ধে সাহসি এই কথাগুলো ফেসবুকে লিখেছিলেন জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ।
দাবি আদায়ে পুলিশের গুলির সামনে একা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এ শিক্ষার্থী। চব্বিশের ১৬ জুলাই, নিরস্ত্র আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ওই মর্মান্তিক দৃশ্য মানতে পারেননি ছাত্র-জনতা। জীবন দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দৃঢ়তা স্ফুলিঙ্গের মত ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পরিণত করেছিল গণঅভ্যুত্থানে। পতন হয়েছিল ১৫ বছর ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের।
পাথর বা রাবার বুলেটে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে, সরকারের এমন বক্তব্যে আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল ছাত্র জনতাকে।
আরও পড়ুন: ১৬ জুলাই ২০২৪ /আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ ৬ শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয় স্বাধীন দেশের রাজপথ
বাংলাদেশ দৃক পিকচার লাইব্রেরি এবং যুক্তরাজ্যের ফরেনসিক আর্কিটেকচার প্রকাশিত ফটো ফরেনসিক করে জানিয়েছে, কোনো রকম হুঁশিয়ারি না দিয়ে মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল আবু সাঈদের ওপর। পরপর দুটি বন্দুক থেকে তিন বার গুলি করা হয়েছিল হাত উঁচিয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদের ওপর। পুলিশের ব্যবহার করা গুলির ম্যাগাজিনও পরে ছিল পাশে।
সহপাঠী জানান, জীবিত আবু সাঈদের প্রতিটি প্রতিবাদ ছিল শান্তিপূর্ণ, অহিংস। আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে কর্মসূচির বাইরেও ছাত্রলীগ বলপ্রয়োগ করেছিল তার ওপর।
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ৩০ জন আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৬ জনকে। পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চলতি মাসেই শুরু হবে মামলাটির আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া।
পীরগঞ্জের সন্তান আবু সাঈদের হত্যার দ্রুত বিচার প্রত্যাশা স্বজন ও এলাকাবাসীর।
শুধু ২৪'এর গণঅভ্যূত্থানের নন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারুণ্যের প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে থাকবেন আবু সাঈদ।
]]>